এই আর্টিকেলে আমি আপনাকে কলকাতার কিছু বিখ্যাত স্ট্রিটফুড এর সন্ধান দেব এবং তা কলকাতার কোথায় পাওয়া যাবে সেইটি আপনাকে জানাবো।
এই তালিকায় আছে চটপটা খাবার, রাস্তার ধারের স্টলের খাবার, এবং হোল মিল যেমন বিরিয়ানি।
আনন্দের শহর কলকাতা মানুষের হৃদয়ে সংস্কৃতি, শিক্ষা জায়গা, অনুষ্ঠান, আচার অনুষ্ঠানে শুধু সেরা নয়, হাজার রকমের রাস্তার খাবার এবং চটপটা খাবারেও সেরা। স্প্লানেড থেকে শ্যামবাজার, গরিয়াহাট থেকে পার্কস্ট্রিট ভরে খাবারের মেলা।
আহার ভোজন রসিকদের কখনোই রাস্তার ধারে মোমো, রোল এর মনভোলানো গন্ধ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
তাছাড়াও কলকাতার ব্যস্ত শহরে অফিস কর্মচারী থেকে শুরু করে কলেজ স্টুডেন্ট সবাই রাস্তার ঠেলা ও রেস্তোরাঁয় খাবারের উপর নির্ভরশীল।
এই তালিকায় যে বিশেষ খাবার থাকছে সেগুলি হল:
- কবিরাজি মোমো
- পনির মশলা ধোসা
- ননভেজ থালি
- কাঠি রোল
- শাওয়ার্মা রাপ
- বিরিয়ানি
- হিং কচুরি এবং জিলিপী
- চিজ মায়ো স্যান্ডেহুইচ
- জাইন্ট বাওয়ার্চি রোল
- ঘটি গরম
এবার দেখি নি প্রত্যেকটি অভিনব স্ট্রিটফুড বিস্তারিতভাবে এবং কোথায় আপনি সেগুলো পাবেন।
১. কবিরাজি মোমো
সুস্বাদু স্ট্রিট ফুড এর মধ্যে মোমর জন্য ভালোবাসার লোকের তালিকা সব সময় বেশি।
মোমো চীন দেশের খাবার যা ইতিমধ্যে ভারতে অনেক জনপ্রিয় হয়ে গেছে। মোমো অনেক রকম ভাবেই পাওয়া যায় যেমন স্ট্রিমড্, প্যান ফ্রাইড, চিলি গ্রেভি মোমো বা শুধু ফ্রাইড।
কিন্তু আজ আমি আপনাদের বলবো মোমোর সম্পূর্ণ অন্যরকম একটি রেসিপি যা ফুলবাগান ক্রসিংয়ের কাছেই গিরিশ পার্কে পাওয়া যায়।
একটি লোকাল স্ট্রীট ফুড আউটলেট আছে যার নাম জিৎ দা মোমো স্টল যেখানে অভিনব কবিরাজি মম পাওয়া যায় ভীষণ কম দামে।
আপনি ৫ পিস কবিরাজি ,মোমো পাবেন ৪৫ টাকায়। কবিরাজি মোমোর স্বাধ এতটাই ভাল কারণ বাইরে আছে কুরকুরে স্তর এবং ভিতরে নরম মাংসের পুর।
আপনাকে এই কবিরাজি মম দেওয়া হবে চিকেন সুপ দিয়ে যার মধ্যে একটি বড় চিকেনের বিশ্ব পাবেন যা ৪৫ টাকায় একদম মন ভরা খাবার। এই মোমোটি জীবনে একবার অবশ্যই ট্রাই করে দেখবেন।
২. পানির মশলা দোসা
এসপ্ল্যানেড শুধু একটি সুন্দর শপিং করার জায়গায় নয়-তাছাড়াও ভীষণ কম দামে অনেক আকর্ষণীয় জিনিস সারা বছর পাওয়া যায়।
তাছাড়াও এখানে শুধু স্ট্রীট ফুডও পাওয়া যায়। নিউমার্কেট এবং হগ্ মার্কেট সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে তেমনই এক বিখ্যাত স্ট্রিটফুড এখানে পাওয়া যায় যার নাম বাটার মাসালা দোসা শুধু মাত্র ৬০ টাকাতে যা খেতেও সুস্বাদু।
আরো অন্যান্য জিনিস এখানে পাওয়া যায় যেমন মাখন ও চিজ দেওয়া দোসা এবং পানীর মাসালা দোসা যার দাম শুধু মাত্র ১০০ টাকা।
আপনি যদি নিরামিষাশী হন অথবা আপনি দক্ষিণ ভারতীয় খাবার খুব পছন্দ করেন তাহলে স্প্লানেড্ কলকাতা তে অবশ্যই এই খাবার খেয়ে যাবেন।
৩. ননভেজ থালি
আপনারা হয়তো অনেকেই জানবেন সল্টলেক সেক্টর – ৫ কে বাংলার আইটি হাব ও বলা হয়।
কিন্তু এই জায়গাতে স্ট্রীট ফুডে খুব জনপ্রিয় বিশেষভাবে থালি তাও আবার ননভেজ থালি শুধু মাত্র ৪০ টাকায়।
হ্যাঁ! সল্টলেক সেক্টর ফাইভে ব্যাকস্টেজ এর বিপরীতে “মামা কি দুকান” আছে যেখানে খুব কম পয়সায় জিভে জল আনা মিল পাওয়া যায়।
খাবারের মধ্যে থাকে ভেজ পোলাও, বাটার চিকেন, আলুর দম আর স্যালাড সাথে রুমালি রুটি বাটার দেওয়া সবকিছুই ৮০ টাকায় পাবেন।
দুপুরের খিদে বাড়ানোর জন্য একজন ভরপুর খাবার আপনি যদি সল্টলেকে কাজ করেন বা কাছে কোন জায়গায় থাকেন তাহলে অবশ্যই এই নন-ভেজ থালি টি খেতে ভুলবেন না।
৪. কাঠি রোল
২১ নম্বর, পাক স্টিট, কোলকাতা তে অবস্থিত কুসুম সেন্টার কলকাতার বিখ্যাত বিশেষভাবে এই কাঠি রোল।
এছাড়াও বহু ধরনের কাবাব এখানে পাওয়া যায় যার দাম মোটামুটি কমই রাখা হয়েছে যাতে সবাই একবার এর স্বাদ নিতে পারে।
এখানে চিকেন রোল ভীষণ নরম ও সুস্বাদু হয় আপনার হৃদয়ের অনুভূতির জাগরণ করবে। আপনি যদি কখনো পার্কস্ট্রিট যান তাহলে অবশ্যই এই রোল ট্রাই করতে পারেন।
সাভার ম্যাপ সাভার আমার অ্যাপস বিশেষভাবে চিকেন ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি একটি লেবানিজ খাবার ভারতীয়রা খুব পছন্দ করেন।
৫. শাওয়ার্মা রাপ্
শাওয়ার্মা রাপ বিশেষভাবে চিকেন ও ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি একটি লেবানিজ খাবার যা ভারতীয়রাও খুব পছন্দ করেন।
শাওয়ারমা নেশন, পল্লিশ্রীর ৪ ওয়ে ক্রসিং এ পেয়ে যাবেন যা কিন্তু বাদ দেওয়া একদম ঠিক হবেনা।
রাস্তার ধারে এই রেস্তোরাঁ শাওয়ার্মা খাবারের জন্য বিখ্যাত এবং তাও ভীষণ কম দামে যা ১২০-২০০ টাকা।
শাওয়ারমা বানানোর এক অভিনব কায়দা আছে। সাওয়ার্মা রাপ ও বার্জার পরিবেশন করা হবে একটু বেশী মেয়োনেজ ও চীজ দিয়ে যা আপনার হৃদয় মোমের মত গলিয়ে দেবে।
৬. বিরিয়ানি
বিরিয়ানি শব্দটি শুনলেই সবার জিভে জল চলে আসে। এটি আরেকটি বিখ্যাত স্ট্রিট ফুড যা সব রেস্টুরেন্টে আপনি পাবেন।
বিরিয়ানির ট্রিট মানে উত্তেজনা তুঙ্গে মানুষের মধ্যে এক অন্যরকম উন্মাদনা কাজ করে। তেমনই এক বিখ্যাত অবস্থান যেখানে ভীষণ ভালো বিরিয়ানি পাওয়া যায় সেটি হল দাদা বৌদি বিরিয়ানি সেন্টার, ব্যারাকপুরে।
কলকাতা থেকে বহু মানুষ সেই জায়গায় গিয়ে ভিড় করে শুধু দাদা বৌদির দোকানের বিরিয়ানি খাবে বলে।
চিকেন বিরিয়ানি রেট হল ১৮৫ এবং মটন বিরিয়ানি হল ২৪০ টাকা।
বিরিয়ানির মধ্যে আলু এবং মাংস দুই ভীষণ ভালো ভাবে রান্না করা এবং নরম থাকে। দাদা বৌদির বিরিয়ানি মাঝেমধ্যে বিরিয়ানির খনিজ গৃহ বলা হয়।
৭. হিং কচুরি এবং জিলাপি
আপনারা সবাই শিয়ালদা রেলওয়ে স্টেশন জীবনে একবার না একবার গিয়ে থাকবেন। শিয়ালদার খাবারগুলি শিয়ালদা স্টেশনের কাছে অবস্থিত একটি ভীষণ ভালো রাস্তার খাবারের তালিকা।
স্ট্রীট ফুডের বিখ্যাত সিয়ালদাহর খাবার গলি জন্য অফিসের মানুষ জন এবং অন্যান্য কর্মচারী শিয়ালদা ছোট এবং রেস্তোরাঁগুলোতে সকালের জলখাবার, দুপুরের খাবার খেয়ে থাকেন এবং খাবারের মান এবং দাম ভালো রাখা হয় যাতে মানুষজনের কোন প্রকার অসুবিধা না হয়।
এই শিয়ালদার গলিগুলোতে হিং কচুরি , মটর পনির গরম গরম এবার এবং সুস্বাদু খাবার বিক্রি করা হয়।
৮. চীজ মেয়ো স্যান্ডউইচ
ডেকার্স লেন, যা জেমস হিকি সরণি হিসেবেও পরিচিত, কলকাতার একটি বিখ্যাত রাস্তার খাবার জায়গা।
এই জায়গায় আপনি অনেক কিছু পাবেন যেমন ফিস কাটলেট, নরম চিকেন পকোড়া ,দুপুরের খাবার এবং আরো খাওয়ার আইটেম যেমন চিকেন স্যান্ডউইচ শুধু মাত্র ৬৫ টাকায়।
এছাড়া অন্যান্য স্যান্ডউইচ গুলি হলো ভেজ চীজ স্যান্ডউইচ যার দাম ৩৫/- ও ৪৫/- টাকায় এগ মেয়ো স্যান্ডউইচ।
৯. জায়নট বাওয়ারচী রোল
বাওয়ার্চী রোল এর মধ্যে চিকেন পনির, ডিম ,মটন এর পুর দেওয়া আছে তা আপনি রোলের প্রত্যেকটি কামড়ের সুস্বাদু ও রসালো স্বাদ সাথে সাথেই পাবেন।
রোলের মধ্যে বহুস্তর পরোটা আছে যা একটি অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ঢাকা থাকে।
যাদবপুর কলকাতা ৮B বাসস্ট্যান্ডে পাওয়া যায় রোল যাকে বলা হয় জাম্বো রোল।
১৮ ইঞ্চ লম্বা এই রোল সেফ রা খুব যত্ন নিয়ে এবং পরিষ্কারভাবেই রোলটি বানায়।
১০. ঘটি গরম
প্রেম নিবেদন করতে গেলে প্রিন্সেপ ঘাটে জান এবং আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকাকে একটি সুন্দর বিকেল উপহার দিন একটি ঘটি গরম আর একটি ভাঁড়ে চা দিয়ে।
এর থেকে সস্তা ও সুস্বাদু খাবার হয়তো আমি কখনো খাইনি কলকাতার মধ্যে।
বাদাম, কাঁচা লঙ্কা, গুঁড়ো মসলা, পেঁয়াজ, টমেটো দিয়ে তৈরি করা এই খাবারটির জিভে জল এনে দেবেই এবং যার দাম মাত্র ১০/-।
বিক্রেতার সাথে থাকে একটি ঘটি এবং জ্বলন্ত কয়লার টুকরো যা এই খাবার আর ও সুস্বাদু করে তোলে।
কলকাতার অলিতে গলিতে এমনি হরেক রকম ও স্বাদের খাবারের ভান্ডার যা একবার দেখে ও খেয়ে শেষ হবেনা।
কিন্তু ভোজনরসিক হয়েও যদি এই খাবার গুলি আপনি না খেয়ে থাকেন তবে বলবো মশাই আপনি খাবারের তালিকার অর্ধেকেরও বেশি জিনিস খাননি।
তাহলে আর দেরি কেনো করছেন? বন্ধুদের নিয়ে আর নাহলে একলাই বেরিয়ে পড়ুন নতুন স্বাদের ভাগ নেওয়ার জন্য।
তারপর আঙুল চেটে পুটে আপনিই বলে বসবেন ” এ স্বাদের ভাগ হবেনা !”