Skip to content

প্রিন্সেপ ঘাট, কলকাতা – ইতিহাস, কভাবে ও কখন যাবেন এই স্থানে

আমাদের শহর কলকাতা, যে নিজেকে সজ্জিত করেছে বিভিন্ন অলংকারের দ্বারা। শহর কলকাতা তার রূপ ,গুণ ও সৌন্দর্যতা দিয়ে মুগ্ধ করে রেখেছে পৃথিবীর সকল প্রান্ত।

আর এই সৌন্দর্যের প্রতীক হিসাবে শামিল হয়েছে প্রিন্সেপ ঘাট

প্রিন্সেপ ঘাট কলকাতার এক ঐতিহ্যপূর্ণ পর্যটক কেন্দ্র, যা ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হয়েছিল। আজও সেই নির্মাণের সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে দেয়। আধুনিক সমাজের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গায় এটি।

আজকের এই লেখনীর মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন,

  1. প্রিন্সেপ ঘাট এর ইতিহাস
  2. কে এই জেমস প্রিন্সেপ
  3. প্রিন্সেপ ঘাটে ঘোড়ার ও দেখার মতন কি আছে
  4. কিভাবে পৌঁছাবেন প্রিন্সেপ ঘাটে
  5. কখন যাবেন প্রিন্সেপ ঘাট

তাহলে চলুন এই বিষয়গুলি বিস্তারিত ভাবে দেখে নেওয়া যাক…

প্রিন্সেপ ঘাটের ইতিহাস

তথ্য অনুযায়ী জানা যায় প্রিন্সেপ ঘাট ব্রিটিশ নির্মিত এক ঘাট। আর এই ঘাট কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিল্প ব্যবস্থা থেকে শুরু করে গড়ে উঠেছে পর্যটক কেন্দ্র।

সাল তখন ১৮৪১, এক Anglo-Indian ঐতিহাসিক বিদ জেমস প্রিন্সেপের নামানুসারে নাম হয় প্রিন্সেপ ঘাটের।

ইতিহাস খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, কলকাতার ঐতিহাসিক স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ প্রাচীন স্থান হল এই প্রিন্সেপ ঘাট যা গড়ে উঠেছে কলকাতা হুগলি নদীর তীরে।

এখানে একটি বিশেষ মনুমেন্ট নির্মাণ করা আছে, যা আজও পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়।

কে এই জেমস প্রিন্সেপ?

জেমস প্রিন্সেপ, নামানুসারে এই প্রিন্সেপ ঘাট এর নামকরণ, তিনি হলেন একজন ইংরেজ পণ্ডিত, প্রাচ্য -বিদ, পুরাতাত্ত্বিক ও বিশিষ্ট ভারত তত্ত্ব-বিদ।

ভারতের টাঁকশালে মুদ্রা-ধাতু পরীক্ষকের কর্মজীবন শুরু করে মুদ্রা-শাস্ত্র, ধাতুবিদ্যা ও আবহাওয়া বিজ্ঞানে নিজের প্রতিভা ফুটিয়ে তুলেছিলেন।

তিনি ধাতু পরীক্ষক হিসাবে কাজ করেছিলেন।

প্রিন্সেপ ঘাটে কি কি রয়েছে

কলকাতার হুগলী নদীর পারে গড়ে উঠেছে মনোরম এই প্রিন্সেপ ঘাট, বলতে পারেন এক পার্কও বটে‌।

ঘাটের চার ধার সুন্দর সুন্দর গাছপালা দিয়ে সাজানো সাথে রয়েছে বসার সিট। আছে নানা বাহারি খাবারের দোকান যেমন-পাউ ভাজি, ফুচকা, ঘুগনি ইত্যাদি।

বলতে পারেন কলকাতা স্ট্রীট ফুডের অধিকাংশ খাবারই প্রায় রয়েছে এইখানে।

পার্কের ভিতর সুসজ্জিত সড়ক এবং সৌন্দর্য বাড়াতে রয়েছে নানান ধরনের লাইটের ব্যবস্থা।

প্রিন্সেপ ঘাটটি ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গের ওয়াটার গেট ও সেন্ট জর্জেস গেটের মাঝে অবস্থিত। সাথে রয়েছে গঙ্গা রাইটএর সুযোগ্য ব্যবস্থা।

আবার রয়েছে প্রিন্সেপ মনুমেন্ট যা এই প্রিন্সেপ ঘাট এর অন্যতম আকর্ষণীয় জিনিস যা প্রিন্সেপ ঘাট এর সংলগ্ন জায়গায় ও বিদ্যাসাগর সেতুর প্রায় পাশেই অবস্থিত।

দিনের অর্ধেক সময় এখানে লোকজন পরিপূর্ণ থাকে। ফটোশুট থেকে প্রি ওয়েডিং শুট করার জন্য অন্যতম জায়গা এই প্রিন্সেস ঘাট।

অল্প বয়সে থেকে মাঝ বয়সী প্রায় সকল প্রকার মানুষকে আপনি এইখানে দেখতে পাবেন।

তবে এখানে কাপেলসদের সংখ্যা একটু বেশি। ফ্রী সময় কাটানো থেকে শুরু করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া পর্যটকদের দেখতে পাবেন এইখানে।

প্রিন্সেপ ঘাটে কি কি করতে পারবেন

এই ব্রিটিশ নির্মিত ঘাটির সৌন্দর্য্যের তুলনা হয়না। যেন বিশ্ব তার অফুরন্ত সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এই ভূমিতে। যেহেতু আমরা আগেই জেনেছি যে, জলাশয় বা গঙ্গা এবং ঘাটকে কেন্দ্র করেই এই পর্যটন কেন্দ্রটি নির্মিত।

তাই সেখানে আপনি পেয়ে যাবেন জল-যানবাহন চড়ার সুব্যবস্থা। মাথাপিছু ও গ্রুপ হিসাবে দরদাম করে আপনি পৌঁছাতে পারেন ঘাটের এই মাথা থেকে ঘাটের ওই মাথা।

জলের ওপর দিয়ে নৌকায় চেপে এইপার থেকে ওপার যাওয়ার মজাই আলাদা, আপনারাও ট্রাই করে দেখতেই পারেন।

ডাঙ্গায় শুধু বসার সিট আছে তা নয়, রয়েছে একটি সুসজ্জিত বাগান ও ঘাটের গেট। বলে রাখি এই গেটটির সৌন্দর্যতাও কিন্তু অসাধারণ।

ঘাটির পাশে দেখতে পাবেন কলকাতা অন্যতম ঐতিহ্যবাহী সেতু, নাম বিদ্যাসাগর সেতু। ঘাটের চারপাশের পরিবেশ বেশ মনোরম ও শান্তিপূর্ণ এবং খোলামেলা।

কলকাতার ঘিঞ্জি শহর থেকে দূরে নিরিবিলি এই স্থান, বিশেষত গোধূলির আলো নানা বাহারি লাইট সবকিছু মিলিয়ে এক অপরূপ দৃশ্য ধারণ করে এই প্রিন্সেপ ঘাট ও মনুমেন্ট।

এখানে গেলে আপনি শান্তি অবশ্যই খুঁজে পাবেন।

কিভাবে পৌঁছাবেন প্রিন্সেপ ঘাটে

প্রিন্সেপ ঘাট Strand Road এর কাছে ও হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত।

সাধারণত বজ বজ লোকাল ট্রেন পরিষেবার মাধ্যমে পৌঁছে যেতে পারেন এই প্রিন্সেপ ঘাটে।

তাই যে সকল যাত্রীদের ট্রেন পরিষেবা কাছে তো তারা ট্রেনের মাধ্যমেও সেখানে পৌঁছাতে পারেন খুব সহজেই।

যদি আপনি শিয়ালদা থেকে ট্রেন ধরেন তাহলে, আপনাকে মূলত বজ বজ লোকাল অথবা মাঝেরহাট লোকাল ধরতে হবে। কয়েকটি স্টেশন যাবার পর নামতে হবে আপনাকে মাঝেরহাট স্টেশন।

রেল ওভার ব্রিজ ক্রস করে আপনাকে পৌঁছাতে হবে ওই পারে। সেখান থেকে আপনি খুব সহজেই প্রিন্সেপ ঘাটের ট্রেন পেয়ে যাবেন। মূলত শিয়ালদা থেকে আপনাকে দুটি ট্রেন এক্সচেঞ্জ করতে হবে।

এক শিয়ালদা থেকে মাঝেরহাট দুই মাঝেরহাট থেকে প্রিন্সেপ ঘাট। এই ঘাট সংলগ্ন রেল স্টেশনটির কোড বা সাংকেতিক নাম হল PPGT.

সরাসরি শিয়ালদা থেকে প্রিন্সেপ ঘাট ট্রেন আছে তবে সেটি খুব কম।

অন্যদিকে আপনি বাস রুট বা অটো রুটেও পৌঁছতে পারেন প্রিন্সেপ ঘাটে।

এছাড়াও রয়েছে ওলা ,উবের ইত্যাদি, যার সাহায্যে আপনি খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন।

প্রিন্সেপ ঘাটে যাওয়ার সঠিক সময়

দিনের প্রায় অধিকাংশ সময়ই খোলা থাকে এই প্রিন্সেপ ঘাট। তবে রাত সাড়ে দশটার আগে খালি করতে হয় এই পার্কটি। বিকেলের দিকে গেলে আপনি সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন যা এই ঘাট থেকে দেখতে অসাধারণ লাগে।

ধরুন আপনি যদি কোনো পিকনিক উপলক্ষে গেছেন, তবে আপনি যথাযথ পরিষেবা পেয়ে যাবেন এইখানে।

কিন্তু পিকনিকের উপকরণ ও সূচিপত্র সবকিছু খুব নিয়ম শৃংখলার মধ্যে রাখতে হবে। পিকনিকে গিয়ে রান্নাবান্না সুযোগ কিন্তু পাবেন না এইখানে।

তবে আপনি যদি শুধুমাত্র ঘুরতে এবং জায়গাটা উপভোগ করতে যান, তবে একদম ঠিক। আপনি রীতিমতন উপভোগ করতে পারবেন এই মনোরম দৃশ্য।

গঙ্গার বোট রাইড থেকে শুরু করে খাবার ফটোশুট সবকিছুর সুব্যবস্থা আপনি এইখানে পেয়েই যাচ্ছেন।

শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা যখনই যাবেন তখনই খোলা পাবেন এই পার্ক।

সর্বশেষে বলা যায়, এই ঘাট কে ঘিরে যে পর্যটক কেন্দ্র গড়ে উঠেছে সেটি বেশ উল্লেখযোগ্য।

সাধারণত কাপেলসদের জন্য বিখ্যাত এই পার্কটি। দিনের প্রায় যেকোনো সময় আপনি কাপেলস দের এখানে দেখতে পাবেন, তাই বিদ্রুপ রুপে অনেকেই এই পার্কটি কে আখ্যা করেন রোমান্টিক পার্ক হিসাবে।

প্রয়াতঃ বছরের শুরুতেই অর্থাৎ ২০১৯ -এ আমরা এক বিখ্যাত সিনেমা দেখেছি, যা বাঙালির মনে এক বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে- নাম বাবাই দা! বুঝতেই পারছেন সিনেমার নাম “পরিণীতা” এই সিনেমারও কিছু মুখ্য গানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল প্রিন্সেপ ঘাটের দৃশ্য।

এছাড়াও ছোট খাটো শর্ট ফিল্ম থেকে শুরু করে, ব্লগ এমনকি নিজের এক্সপিরিয়েন্স বিল্ড আপ করার জন্য নানান ফটোশুট ও ভিডিও বানানো হয় এইখানে।

তাই প্রিন্সেপ ঘাটে ক্যামেরা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এমন লোকজন প্রচুর চোখে পড়বে আপনার।

যদি শীতের আমেজে কাছাকাছি ঘুরতে যেতে চান, তাহলে প্রিন্সেপ ঘাট কিন্তু মন্দ হবে না।


পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে কিছু ওয়েব স্টোরি (Web Stories):


এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন