Skip to content

কলকাতার ৪টি বিখ্যাত হেরিটেজ ক্যাফে যেকানে আপনি ঘুরে আস্তে পারেন

কলকাতা মহানগর একটি আনন্দের শহর, যার মধ্যে একটি সমৃদ্ধ এবং ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার রয়েছে যা এখানকার জনগণের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে।

শহরের বিশিষ্ট হেরিটেজ ক্যাফেগুলির একটিতে ফুরফুরে বিকেল উপভোগ করার চেয়ে আরামদায়ক আর কিছুই হতে পারে না। এই ক্যাফেগুলি কলকাতার পুরানো শহরতলিতে লুকানো রত্ন। এই ক্যাফে গুলি সরু গলির মধ্যে অবস্থিত।

তাদের বিভিন্ন শৈলী এবং থিম রয়েছে, তবে তারা সকলেই সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করে এবং তাই কলকাতা ও দুর দুরন্ত থেকে আসা মানুষজনদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

এই নিবন্ধে, আপনি কলকাতার নিম্নলিখিত হেরিটেজ ক্যাফেগুলি সম্পর্কে জানতে পারবেন,

  1. ইন্ডিয়ান কফি হাউস
  2. ফ্লুরিস
  3. প্যারামাউন্ট
  4. মিত্র ক্যাফে

আসুন এই প্রতিটি ক্যাফে বিস্তারিতভাবে দেখুন।

১. ইন্ডিয়ান কফি হাউস

ইন্ডিয়ান কফি হাউস

ইন্ডিয়ান কফি হাউস হল কলকাতার একটি প্রাচীন ক্যাফে, যা একটি অভিনব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে রেখেছে।

১৯৪২ সালে, ইন্ডিয়ান কফি হাউস অ্যালবার্ট হলে অন্য সকল রেস্তোঁরাগুলির সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই ক্যাফেটি কবি, লেখক, দর্শন, বুদ্ধিজীবী এবং সামাজিক কর্মীদের আড্ডার জন্য একটি নিখুঁত পরিবেশ প্রদান করে এসেছে। আপনি জেনে মুগ্ধ হবেন যে মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায়, অপর্ণা সেন, মান্না দে এবং আরও অনেক কিংবদন্তি এই ঐতিহাসিক ক্যাফেতে নিয়মিত  আসতেন।

তবে কফি হাউসের অতীতের সারল্য ও বৈশিষ্ট্য আজও রয়ে গেছে। লম্বা ঝুলন্ত পাখা সহ উঁচু সিলিং, পাট কাঠের ও বেতের চেয়ার এবং জরাজীর্ণ দেয়াল অভ্যন্তরটির বেশ সুবর্ণ বর্ণনা দেয় ও তারা পুরাতন সময়ের প্রতিফলন করে।

এটি ব্যস্ত কলেজ স্ট্রিট এলাকায় অবস্থিত হওয়ায়, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, কলকাতা ইউনিভার্সিটি এবং আশেপাশের কলেজগুলির ছাত্ররা এবং অধ্যাপকরা এটিকে কলেজের সময়ের পরে ভাল সময় কাটানোর জন্য একটি আদর্শ জায়গা বলে মনে করেন।

সাশ্রয়ী মূল্যে ভাল নিরামিষ এবং আমিষ খাবারের বিকল্প রয়েছে এই ক্যাফেতে। এখানে কবিরাজি খেতে কিন্তু একদম ভুলবেন না!

২. ফ্লুরিস (Flury’s)

ফ্লুরিস  ব্রিটিশ যুগের ইতিহাসে ভরা একটি জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী ক্যাফে। এটি ঔপনিবেশিক আমলের ইউরোপীয় একটি ক্যাফে। এটি কলকাতার সমস্ত অঞ্চল থেকে অনেক মানুষের ভিড় আকর্ষণ করে। 

অভ্যন্তর সজ্জা, বেশ সুন্দর রং এবং আসবাবপত্র সঙ্গে একটি ঔপনিবেশিক আভা প্রতিফলিত করে ফ্লুরিস। আউটলেটটি সুস্বাদু ব্রেকফাস্ট, পেস্ট্রি, কেক, প্যাটিস এবং অন্যান্য খাবারের জন্য সুপরিচিত। বছরের পর বছর ধরে মেনু একই রয়ে গেছে এবং ক্যাফেটি তার খাবারের মান বজায় রেখেছে।

এই ক্যাফে এখন অনেক নিরামিষ খাবারের বিকল্প চালু করেছে। তবে এটি নতুন পরিষেবা ও খাবারের সাথে নিজেকে আধুনিক রাখছে এবং পুরানো ঐতিহ্য গুলি কেও ধরে রাখছে।

পুরানো কলকাতার নিছক আনন্দ এবং পরিপূর্ণতা এখানে নির্বিঘ্নে মিশে যায় এবং দর্শকদের বিভিন্ন স্ন্যাকস এবং চায়ের একটি অনন্য স্বাদ দেয়।

৩. প্যারামাউন্ট (কলেজ স্ট্রিট)

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাফে যা কলকাতার লোকেদের মধ্যে দীর্ঘ পরিচিত তা হল কলেজ স্ট্রিটের প্যারামাউন্ট। “প্যারামাউন্ট” শব্দটি আক্ষরিক অর্থে “উচ্চতর” বা “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ”। এবং কলকাতার মানুষজন এটিকে কলকাতার সবচেয়ে আইকনিক এবং উল্লেখযোগ্য জুস জংশন বলে মনে করেন।

গ্রীষ্মে এটি কলকাতাবাসীদের জন্য সত্যিই একটি আরামদায়ক জায়গা হয়ে ওঠে। জুস পার্লার বা শরবত এর আতুর ঘরে, সাশ্রয়ী মূল্যে কোকো মালাই, ডাব সরবত, ম্যাঙ্গো ম্যানিয়া, রোজ মালাই এবং আরও অনেক চমৎকার ও রিফ্রেশিং পানীয় পরিবেশন করা হয়। আনারস মালাই, খুস খুস, কোল্ড কফি, গ্রিন ম্যাঙ্গো সিরাপ স্থানীয়দের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।

পুরাতন কালে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই ক্যাফে পরিদর্শন করেছেন এবং দশকের পর দশক ধরে বাঙালি সমাজের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে রয়েছে এই প্যারামাউন্ট।

৪. মিত্র ক্যাফে

কিছু খাঁটি বাংলা খাবারের স্বাদ নেওয়ার জন্য মিত্র ক্যাফে অন্যতম সেরা জায়গা। এই ক্যাফের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুধুমাত্র বাঙালিরাই আবেগ প্রবণ হয়ে ওঠে। আদি উপাদান দিয়ে রান্না করা খাবারের সুগন্ধ মুখে জল এনে দেয় ও এক অনন্য অনুভূতির সৃষ্টি করে।

১৯১০ সাল থেকে এই ক্যাফে গ্রাহকদের মধ্যে বন্ধুত্বের একটি স্থির বন্ধন বজায় রেখেছে। যত্ন এবং ভালবাসার সাথে রান্না করা খাবারগুলির মধ্যে তা প্রকাশ পায়। ফিশ কবিরাজি, ডোবা তেলে ভাজা ক্রিস্পি ফিশ কাটলেট এবং সুস্বাদু ঠান্ডাই এখানে পরিবেশন করা হয়।

মিত্র ক্যাফের কর্মীরা গ্রাহকদের মিষ্টি আচরণের সাথে শুভেচ্ছা জানায়। এই ক্যাফের সুস্বাদু খাবারের স্বাদ গ্রহণ করার পরে আপনাকে বেশ আনন্দিত ও প্রাণোচ্ছ্বল দেখাবে।

এগুলি হল কলকাতার কিছু পুরনো ক্যাফে যেখানে আপনি যেতে পারেন৷ একটি আদর্শ ওল্ড-স্কুল ডেট আইডিয়ার জন্য এই চমৎকার ক্যাফেগুলিতে আড্ডা দিন এবং সুস্বাদু খাবার উপভোগ করুন।

কর্মীদের আচরণের প্রশংসা করতে ভুলবেন না, এবং সাক্ষী থাকুন সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার, এবং পুরানো কিন্তু সুন্দর অভ্যন্তরীণ যা এই ক্যাফে গুলি ধারণ করে!


এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন