Skip to content

অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে ঘুরে দেখার ৭টি সেরা পর্যটন কেন্দ্র

অযোধ্যা পাহাড় পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র। এই পাহাড়টি দলমা পাহাড়ের অংশ।

এই জায়গাটি কলকাতার কাছে একটি নিখুঁত সপ্তাহান্তের গন্তব্য এবং শীতকালে এখানে মানুষের ভালোই ভিড় থাকে।

আপনি যদি অযোধ্যা পাহাড়ে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন, তাহলে কলকাতার কাছে এই পাহাড় আপনার এটি একটি স্মরণীয় ভ্রমণ হয়ে থাকবে।

এছাড়াও অযোধ্যা পাহাড় গেলে নিকটবর্তী অনেক আকর্ষণ আছে যেগুলি আপনি ঘুরে দেখতে পারেন।

এই নিবন্ধে, আপনি অযোধ্যা পাহাড়ে দেখার জন্য নিম্নলিখিত স্থানগুলি সম্পর্কে জানতে পারবেন,

  1. গাজাবুরু পাহাড়
  2. আপার ও লোয়ার ড্যাম
  3. ময়ূর পাহাড় ভিউ পয়েন্ট
  4. বামনি জলপ্রপাত
  5. তুরগা গ্রাম এবং জলপ্রপাত
  6. মার্বেল লেক
  7. মুখোস গ্রাম

তাহলে চলুন এই প্রতিটি জায়গা বিস্তারিতভাবে দেখে নেওয়া যাক।

১. গজাবুরু পাহাড়

গজাবুরু পাহাড় অযোধ্যা পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থিত এবং বিশ্রাম করার জন্য একটি সুন্দর স্থান। এই জায়গাটির একটি স্বর্গীয় সৌন্দর্য রয়েছে।

এটি রোমাঞ্চের সন্ধানকারীদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল, মূলত রক ক্লাইম্বারদের যারা উঁচু ভূখণ্ডের উপর কিছু রোমাঞ্চকর ক্রিয়াকলাপ করতে পছন্দ করে।

আপনি এখানে পিকনিক এবং ক্যাম্পিং ও করতে পারেন এবং নিয়মিতভাবে আয়োজিত প্রকৃতি শিবিরে(nature camp) যোগদান করতে পারেন।

গাজাবুরু পাহাড়ে ক্যাম্পিং এবং ট্রেকিং আপনাকে কিছু শান্তির মুহূর্তও প্রদান করবে। একদৃষ্টিতে রাতের ঘন কালো আকাশে ফুটে ওঠা তারার দিকে তাকিয়ে থাকা, আশেপাশের রজনী সৌন্দর্যের অন্বেষণ করা, প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রশংসা ও মৃদু ঠান্ডা বাতাস অনুভব করার সুযোগ দেবে।

২. উপরের এবং নীচের বাঁধ (Upper Dam & Lower Dam)

পুরুলিয়া তে অবস্থিত একটি বাঁধ

অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে দেখার আরেকটি বিখ্যাত আকর্ষণ হল উপরের বাঁধ (Upper Dam)। পুরুলিয়ার শুষ্ক অঞ্চলে জলের বেশ অনটন দেখা গেলে এই জলাশয় গুরুত্বপূর্ণ জলের উৎস হয়ে থাকে। এটি একটি বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত একটি হ্রদ ও গঠন করে। লেকের পাশের রাস্তাটি অযোধ্যা পাহাড়ের উপরে সূর্যাস্তের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখায়।

নিচের বাঁধটি (Lower Dam) উপরের বাঁধের চেয়েও বেশি মনোরম। এটি পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত এবং হ্রদ জুড়ে রাস্তাটি শান্ত হ্রদ এবং সবুজ পাহাড়ের সুস্পষ্ট দৃশ্য দেখায়। আপনি আপনার ক্যামেরার মাধ্যমে চারিপাশের আশ্চর্যজনক ফটো ক্যাপচার করতে পারেন।

৩. ময়ূর পাহাড় ভিউ পয়েন্ট

ময়ূর পাহাড় ভিউ পয়েন্ট

ময়ূর পাহাড় পুরুলিয়ার একটি অপরূপ পর্যটন কেন্দ্র। এই পাহাড়টি অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে একটি দেখার মত গন্তব্য। তবে পাহাড়ের উচ্চতা এখানে বেশ কম এবং পাহাড়কে ঢেকে রাখা সবুজ গাছগুলো দেখতে বেশ মনোমুগ্ধকর।

এই পাহাড়ে পৌঁছানোর পথ গন্তব্যের চেয়েও বেশী রোমাঞ্চকর। একে বেঁকে চলে যাওয়া রাস্তা, ছোট গ্রাম এবং পথের ধারে সবুজ ধানক্ষেত আপনার ভ্রমণকে আনন্দকর ও রোমাঞ্চকর করে তোলে। তাই অনেকেই এই অযোধ্যা পাহাড় বা নিকটবর্তী দেখার জায়গা গুলি মিনি দার্জিলিং বলে থাকে।

পাহাড়ের পাদদেশে চা-নাস্তা বিক্রির কিছু দোকান আছে। আশেপাশের পরিবেশ বেশ প্রশান্তিদায়ক। আপনি সেলফি এবং অসংখ্য ফটো ক্লিক করতে পারেন এবং কিছুক্ষণ পাথুরে ভূখণ্ডে বসে থাকতে পারেন। পাহাড়ের চূড়ায় একটি ছোট হনুমান মন্দির রয়েছে। আপনি এখানে ভগবান বজরংবলীর প্রার্থনা করতে পারেন এবং পূজা দিতে পারেন।

পরিষ্কার নীল আকাশের গা ঘেঁষে সবুজ এবং বাদামী কৃষি জমির দৃশ্য আপনাকে পাহাড়ের চূড়ায় উত্তীর্ণ হওয়ার কঠোর ও দীর্ঘ পরিশ্রমের পরে উত্সাহিত এবং সতেজ বোধ করাবে।

৪. বামনি জলপ্রপাত

বামনি জলপ্রপাত

বামনি জলপ্রপাত পুরুলিয়ার একটি বিখ্যাত আকর্ষণ এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম দর্শনীয় জলপ্রপাত। এটি অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে অবস্থিত। এবড়োখেবড়ো মালভূমি এবং সবুজ বনভূমির মধ্যে অবস্থিত স্বচ্ছ ঝর্নার দৃশ্যটি বেশ মন্ত্রমুগ্ধকর দেখায়।

এলাকাটি প্রাকৃতিক শান্তি ও সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি এবং তাই শহরের ব্যস্ততার থেকে একটি প্রশান্ত পরিত্রাণ প্রদান করে। আপনি অবিরন্ত ভিজে থাকা পাথর, পিছল শ্যাওলা, স্প্রুস গাছ এবং কুয়াশাচ্ছন্ন বাতাসের তাজা সুবাস উপভোগ করতে পারেন। এখানে আপনি জলপ্রপাতের পাশে বিশাল লগগুলির উপর দিয়ে প্রবাহিত জলের প্রশান্তিময় শব্দ শুনতে পারেন।

জলপ্রপাতটি ফটো তোলার জন্য একটি সুন্দর পটভূমি। দীর্ঘ সময় ধরে এখানে বসে থাকার ও আশেপাশের পরিবেশের প্রশংসা করার জন্য এটি একটি আরামদায়ক জায়গা প্রদান করে। আপনি এখানকার প্রকৃতির শান্ততা এবং সৌন্দর্য দ্বারা সতেজ এবং পুনরুজ্জীবিত বোধ করবেন। এটি আপনার মেজাজ উন্নত করবে এবং অভ্যন্তরীণ আত্মাকে সতেজ করে তুলবে।

৫. তুরগা গ্রাম এবং জলপ্রপাত

তুরগা বাঁধ

তুরগা গ্রাম অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে একটি বিশেষ দেখার মতো জায়গা। গ্রামটি তুরগা জলপ্রপাতের জন্য বিখ্যাত, যা দেখতে আকাশ থেকে ঝরে পড়া সাদা মুক্তার মতো। এটি আদিম সৌন্দর্যের একটি চিহ্ন এবং দূর দেখে মনে হয় যেন এটি পরিষ্কার নীল আকাশ থেকে প্রবাহিত হচ্ছে। এই স্থানটি প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি অনন্য এবং নির্মল অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

এই জায়গাটি উপভোগ করার সবচেয়ে সূক্ষ্ম উপায় হল রাত্রিবেলা ক্যাম্প এর আয়োজন করা। রাতে প্রকৃতিকে দর্শন করা এবং ঝি ঝি পোকার ও স্নিগ্ধ জলপ্রপাতের শব্দে নিজেকে নিমজ্জিত করা যায় এখানে। আপনি সারা রাত তারার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে পারেন এবং পার্শ্ববর্তী পাহাড় এবং বন থেকে ঠান্ডা বাতাস অনুভব করতে পারেন। এটি অবশ্যই আপনার শরীর এবং হৃদয়কে পুনরুজ্জীবিত করবে।

গ্রামটিও সুন্দর এবং রঙিন, বিশেষ করে বসন্তকালে যখন চারিদিক কৃষ্ণচূড়া, পলাশ ফুল এর রঙের ছঠায় চারিদিক ভরে যায়। এটি সত্যিই বাংলার সেরা অফবিট উইকএন্ড গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি।

৬. মার্বেল লেক

মার্বেল লেক

মার্বেল লেক খয়েরী রঙের পাহাড় এবং পুরুলিয়ার দেহাতি আকর্ষণের মধ্যে একটি দুর্দান্ত গন্তব্য। এই রত্নটি একটি উপজাতীয় অঞ্চলে অবস্থিত যা শাল বনে সুসজ্জিত এবং লাল মাটির সাথে একটি অপরূপ বৈসাদৃশ্য তৈরি করে।

এই প্রাকৃতিক মরূদ্যানটি বর্ষাকালে আরও সুন্দর দেখায় যখন হরকা বান বা আকস্মিক বন্যাতে ভরে যায়। আপনি বামনি জলপ্রপাতের উপর থেকে এই হালকা নীল রঙের হ্রদের একটি রোমাঞ্চকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। এই হ্রদটির একটি শান্ত এবং প্রশান্তিময় পরিবেশ রয়েছে যা আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্য এবং শান্তিপূর্ণ বোধ করাবে।

আপনি হ্রদের ধারে বসতে পারেন, নুড়িপাথরের উপর হাঁটতে পারেন এবং আপনার প্রিয়জনদের সাথে অসংখ্য ছবি এবং সেলফি তুলতে পারেন।

৭. মুখোস গ্রাম

মুখোস গ্রামে একটি ঘর

আপনারা সবাই পুরুলিয়ার বিখ্যাত এবং ঐতিহ্যবাহী ছাউ নাচের কথা শুনেছেন যাতে রঙিন পোশাক এবং চোখ ধাঁধানো ভারী মুখোশ ব্যবহার করা হয়। মুখোশ তৈরি করা হয় চরিদা নামের একটি গ্রামে। এটি অযোধ্যা পাহাড়ের কাছাকাছি অবস্থিত।

এখানে তৈরি অনন্য মুখোশের কারণে চরিদাকে প্রায়শই “মুখোস গ্রাম” বলা হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুখোশ তৈরির নাটকীয় ঐতিহ্যের সাথে জড়িত এখানকার এলাকাবাসী। মুখোশ কর্মশালায় এবং তাদের বাড়ির বাইরে প্রদর্শিত থাকে মুখোশ। বুদেশ্বর বলে এক ব্যাক্তি ছিলেন চরিদায় প্রথম মুখোশ প্রস্তুতকারক।

মুখোশগুলি মাটির মতো প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় এবং প্রাকৃতিক রং দিয়ে আঁকা হয়। এর পর পুঁতি এবং ফিতা দিয়ে সাজানো হয় এগুল।

এই মুখোস গ্রাম পরিদর্শন করা আপনাকে পুরুলিয়ার মানুষের মূল সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ছাউ নৃত্য শৈলী এবং জীবিকা সম্পর্কে একটি অন্তর্দৃষ্টি দেবে।

এগুলি হল কিছু বিখ্যাত আকর্ষণ এবং দর্শনীয় স্থান যা অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে অবস্থিত।

এই সমস্ত স্থানগুলি অযোধ্যা পাহাড়কে একটি নিখুঁত ভ্রমণের গন্তব্য করে তোলে।

আপনি এই অফবিট গন্তব্যে আপনার ছুটির পরিকল্পনা করতে পারেন। শহুরে বন্ধন থেকে রেহাই পেতে এবং প্রকৃতির মাঝে কিছু সময় কাটাতে অবশ্যই বেরিয়ে আসুন এই জায়গা গুলিতে।


এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন