সকালের জল খাবার হল সুস্বাদু খাবার দিয়ে পেট ভরানোর উপযুক্ত সময়। একটি সঠিক এবং সুস্বাদু সকালের নাস্তা আপনাকে চনমনে বোধ করতে সাহায্য করে এবং সারাদিন আপনার মেজাজ উন্নত রাখে।
কলকাতার কিছু এলাকাতে কিছু সুপরিচিত প্রাতঃরাশের খাবার পাওয়া যায় যেখানে আপনি সাশ্রয়ী মূল্যে সুস্বাদু খাবার খেতে পারেন।
ADVERTISEMENT
আপনার দৈনন্দিন কাজের সময়সূচীর জন্য একটি ভাল প্রাতঃরাশ অপরিহার্য, তাই আপনাকে এই জায়গাগুলি জানতে হবে এবং এখানে উপলব্ধ খাবারগুলি খেয়ে অবশ্যই দেখতে হবে।
এই নিবন্ধে, আপনি কলকাতার কয়েকটি বিখ্যাত ব্রেকফাস্ট স্থান সম্পর্কে ও কিছু সুস্বাদু খাবারের বিষয়ে জানতে পারবেন,
তাহলে চলুন এই জায়গা প্রতিটি বিস্তারিতভাবে দেখে নেওয়া যাক।
১. শিয়ালদহ
অবস্থান | শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে |
প্রাতঃরাশের জন্য কিছু নামকরা পদ | কচুরি, আলুর দম, জিলিপি |
সুস্বাদু প্রাতঃরাশের জন্য শিয়ালদহ অন্যতম সেরা গন্তব্য। শিয়ালদহ স্টেশনের কাছে বহু দোকানে কয়েকশ লোক সকালের নাস্তা করার জন্য ভিড় করে।
ADVERTISEMENT
বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকান এবং খাবারের ঠেলা কচুরি, গরম ঘুগনি, আলুর দম, পনিরের সবজি, জিলিপী এবং আরও অনেক সুস্বাদু আইটেম বিক্রি করে। এই সমস্ত প্রাতঃরাশের বিকল্পগুলি সুস্বাদু এবং সাশ্রয়ী মূল্যেরও।
তাই নিঃসন্দেহে, আপনি শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশনের কাছের দোকানগুলিকে সকালের নাস্তা করার জন্য বেছে নিতে পারেন যদি আপনি কলকাতায় ভ্রমণ করেন বা তার কাছাকাছি থাকেন।
২. টেরিটি বাজার (পুরাতন চায়নাটাউন)
অবস্থান | টেরিটি বাজার, টেরিটি |
প্রাতঃরাশের জন্য কিছু নামকরা পদ | মোমো, স্প্রিং রোল, হাক্কা নুডলস |
টেরিটীর সরু গলিগুলো চাইনিজ ব্রেকফাস্ট করার জন্য উপযুক্ত। এটি দীর্ঘ রন্ধনসম্পর্কীয় সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। জায়গাটি আকর্ষণীয় ও খাবারের স্টলগুলিতে সুস্বাদু চীনা খাবার বিক্রি হয়।
এর মধ্যে রয়েছে মোমো, চিকেন পাইস, ফিশ সুই মাইস, স্প্রিং রোল, হাক্কা নুডলস, সুইট বল, নারকেল বল, ফিশ বল স্যুপ, স্টিকি রাইস ইত্যাদি খাবার।
তাই আপনি যদি আমার মত একজন খাদ্য প্রেমী হন, বিশেষ করে চিনা খাবার, তাহলে আপনার কাছে টেরিটী বাজার একটি স্বর্গর মত। এটি ভোর পাঁচটা থেকে খোলা থাকে। এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যকর স্টিমিং ব্রেকফাস্ট পাওয়া যায়।
৩. ডেকার্স লেন
অবস্থান | ডেকার্স লেন, এস্প্লানেড |
প্রাতঃরাশের জন্য কিছু নামকরা পদ | পুরী-সাবজি, ফিশ ফ্রাই, ব্রেড টোস্ট |
ডেকার্স লেন যুগ যুগ ধরে অফিসগামীদের জন্য সুস্বাদু সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবার পরিবেশন করে আসছে। এসপ্ল্যানাদের কাছে এই সরু গলিতে নিয়মিত মানুষের প্রবাহ বজায় রাখে এবং লোকেরা এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে বিভিন্ন ধরণের খাবার খেতে পারেন।
এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার খিচুড়ি এবং তেলেভাজা বিক্রি হয়। বলা যায়, এই খাবারটি বিরল এবং খুঁজে পাওয়া কঠিন। খিচুড়ির সাথে ব্যাসনে ভাজা সবজি একটি অসাধারণ খাবার।
ADVERTISEMENT
ডেকার্স লেন পরিদর্শন করার সময় চিত্ত বাবুর দোকানে অবশ্যই যাবেন। ফিশ ফ্রাই, মাটন রেজালা, ব্রেড টোস্ট উইথ চিকেন স্টু, ফ্রাইড রাইস এবং চিলি চিকেন এমন কিছু বিশেষ খাবার আইটেম আপনি এখানে পাবেন।
পুরি-সাবজি এবং লস্যি হল অন্যান্য খাবার আইটেম যা আপনি ডেক্রেস লেনে খেতে পারেন।
৪. ছাঙ্গানি ভুজিয়া ভান্ডার
অবস্থান | সোভারাম বাসাক স্ট্রিট, জোড়াসঙ্কো |
প্রাতঃরাশের জন্য কিছু নামকরা পদ | ক্লাব কচুরি |
সময় | সকাল ৭টা থেকে ১১টা |
ছাঙ্গানি কচুরিওয়ালা কলকাতার বিখ্যাত ক্লাব কচোরি বিক্রেতাদের মধ্যে একজন যার নতুন করে পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। বিশ্বাস করুন, মাত্র ৩৬ টাকায় এক অসাধারণ খাবার পাওয়া যায় এখানে।
এই প্রাতঃরাশের দোকান (ছাঙ্গানি ভুজিয়া ভান্ডার) জোড়াসাঁকোর সোভারাম বসাক স্ট্রিটে অবস্থিত। ক্লাব কচুড়িগুলো বড় লোহার কড়াইতে দুবার তেলে ভাজা হয়। সুস্বাদু আলুর তরকারি একটি বড় পাত্র তে প্রস্তুত করা হয়। জিভে জল আনা বড় আকারের ঝিলিপিও তৈরি করা হয় এখানে।
শাল পাতায় এই খাবার পরিবেশন করা হয়, এবং চারটি গরম গরম ক্লাব কচুরি এবং আলুর তরকারি একসাথে বিক্রি করা হয়। ক্লাব কচুরিগুলির বিক্রি বেশ ভালো রকম হয় এবং দোকানটি সকাল ৭ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
আশেপাশের লোকজন এবং অফিস বাবুরা প্রায়ই এই সুস্বাদু ব্রেকফাস্ট উপভোগ করতে এই স্থানে ভিড় জমায়।
৫. হরিদাস মোদক
অবস্থান | ৫ পয়েন্ট ক্রসিং, শ্যামবাজার |
প্রাতঃরাশের জন্য কিছু নামকরা পদ | পুরী-সাবজি, মিষ্টি |
হরিদাস মোদক অবস্থিত শ্যামবাজারে। এটি একটি পুরানো মিষ্টির দোকান যা কলকাতায় বিভিন্ন সুস্বাদু প্রাতঃরাশের বিকল্প সরবরাহ করে।
আলুর তরকারি এবং মিষ্টান্নের সাথে পরিবেশন করা গরম গরম ফুলকো লুচির চেয়ে ভাল জলখাবার আর কী হতে পারে? হ্যাঁ, এই বিখ্যাত বাঙালি ব্রেকফাস্ট কোনো কিছু কেই টেক্কা দিতে পারবে না। হরিদাস মোহনে লুচি, আলু সবজি, সিঙ্গারা, দই এবং দুটি মিষ্টি পরিবেশনের করা হয় ব্রেকফাস্ট থালি তে। একদম মুখে জল আনা খাবার!
ADVERTISEMENT
তাছাড়া এই সমস্ত খাবার আসে মাত্র ৫০ টাকায়। তাই শ্যামবাজারের কাছে যদি আপনার অফিস থাকে বা আপনি এই জায়গার কাছাকাছি এলাকায় নিয়মিত পরিদর্শক হন, তাহলে এই লোভনীয় প্রাতঃরাশ একদম মিস করবেন না।
৬. মহারানী চা এবং টিফিন
অবস্থান | সরত বোস রোড (রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের কাছে) |
প্রাতঃরাশের জন্য কিছু নামকরা পদ | হিং কচুরি, আলুর সবজি, জিলাপি |
ভবানীপুরের শরত বোস রোডে অবস্থিত মহারানি চা এবং টিফিন, গরম হিং কাচোরি বিক্রেতা হিসেবে ভীষণ ভালো একটি বিকল্প তাও আবার শুধুমাত্র ১০ টাকা-তে। এটি সুস্বাদু আলুর তরকারি (আলু সবজি) দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
আপনি জিলিপি এবং চায়ের সাথে এই বিশেষ ব্রেকফাস্ট করতে পারেন। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। তাই আপনি যদি দক্ষিণ কলকাতার দিকে যাচ্ছেন তবে সাশ্রয়ী মূল্যে একটি দুর্দান্ত প্রাতঃরাশের জন্য এই দোকানটিতে অবশ্যই যাবেন।
এইগুলি হল কলকাতার কিছু বিখ্যাত প্রাতঃরাশের জায়গা যেখানে একবার অন্তত আপনার অবশ্যই যাওয়া দরকার।
কলকাতার প্রতিটি কোণে আরও অনেক জায়গা এবং রেস্তোরাঁ রয়েছে যেখানে সুস্বাদু সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হয়। তবে এই উল্লিখিত স্থানগুলি যুগ যুগ ধরে কলকাতার বাসিন্দাদের মধ্যে বেশি স্বীকৃত। খাঁটি প্রাতঃরাশের রেসিপিগুলির স্বাদ নিতে এই স্থানগুলিতে অবশ্যই যাবেন।
আপনি যদি কলকাতায় যান, তবে কলকাতার রাস্তার খাবারগুলি (স্ট্রীট ফুড) খেয়ে দেখতে ভুলবেন না যা উভয়ই অনন্য এবং সুস্বাদু।
এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন
- গড় পঞ্চকোট (পুরুলিয়া) – কোথায় থাকবেন, কি কি দেখবেন জেনে নিন
- বড়ন্তি (পুরুলিয়া) পশ্চিমবঙ্গ – রিসোর্ট, ঘুরে আসার সেরা সময়
- হাওড়া জেলার ৮টি দর্শনীয় স্থান – পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ
- অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে ঘুরে দেখার ৭টি সেরা পর্যটন কেন্দ্র
- বেনারস শহরের ৭টি হিন্দু ধর্মীয় স্থান যেকানে আপনি ঘুরে আস্তে পারেন
- কলকাতার ৪টি বিখ্যাত হেরিটেজ ক্যাফে যেকানে আপনি ঘুরে আস্তে পারেন