Skip to content

মৌসুনি দ্বীপ – কি ভাবে যাবেন, খরচ, কোথায় থাকবেন

সপ্তাহের শেষে কাজের ক্লান্তি সারানোর জন্য কাছেপিঠে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হলে বেশ ভালো লাগে।

সেরকমই একটি সুন্দর জায়গা হল মৌসুনি আইল্যান্ড বা মৌসুনি দ্বীপ।

ADVERTISEMENT

আন্দামান-নিকোবর অনেকেই গিয়ে থাকবেন। তবে একদিন ছুটি কাটানোর জন্য মৌসুনি দ্বীপ কলকাতার কাছে একটি জনপ্রিয় ডেস্টিনেশন যা কয়েক বছরে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

এই ব্লগ টিতে আমি আমার মৌসুনি দ্বীপ ঘোরার সমস্ত রকম অভিজ্ঞতা আপনাদের জানাবো।

মৌসুনি দ্বীপ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ভাগে অবস্থিত।

আমি তখন কলেজে পড়তাম এবং হঠাৎ একদিন ঘর থেকে মা ফোন করলেন বললেন সপ্তাহের শেষে কাছাকাছি সবাই মিলে একটি টুর করতে যাবার প্ল্যান করছে এবং আমাকে বললেন যদি আমিও সেইখানে যেতে পারি তো তাদের ও খুব ভালো লাগবে।

কলেজের অ্যাসাইনমেন্ট, প্রাকটিক্যাল সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে এক চান্স এ আমি বলেছিলাম হ্যাঁ। কারণ ঘুরতে যাওয়া আমার শখের তালিকার মধ্যে সবসময় প্রথম ছিলই।

আমি ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলাম কারণ প্রথমত আমি একটি ঘুরতে যাবার অফার সারপ্রাইজ হিসেবে পেয়েছিলাম এবং দ্বিতীয়তো দ্বীপপুঞ্জ ঘুরতে যাওয়া তাও আবার কাছাকাছি কলকাতার মধ্যে, এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা হবে।

ADVERTISEMENT

মা বললেন মৌসুনি দ্বীপ সুন্দরবনের কাছাকাছি একটি জায়গায় অবস্থিত। তাই আর দেরি না করে ক্যামেরা, ট্রাইপড স্টেন্ড দিয়ে গোছাতে আরম্ভ করলাম।

যদিও জায়গাটা আমার কাছে অজানা এবং নতুন, তাই আমি ফোনের গুগল ক্রোম অন করে মৌসুনি আইল্যান্ড সার্চ করতেই চলে এলো একরাশ সুন্দর ছবি। তাই দেখে সে আনন্দ ও উৎসাহ ধরে রাখার মত ছিল না।

ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আমার বাবা মা এলেন। সঙ্গে ছিলেন বাবার একজন অফিস কলিগ এবং তাঁর ফ্যামিলি। আর দেরি না করে গাড়িতে উঠে পড়লাম এবং মৌসুনি দ্বীপ এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

মৌসুনি দ্বীপ এর লোকেশন

মৌসুনি দ্বীপ এর পশ্চিমবঙ্গ দক্ষিণ দিকে অবস্থিত, বকখালির কাছাকাছি।

তিনদিকে বঙ্গোপসাগর এবং একদিকে একটি নদী চলে গেছে এবং একটি দ্বীপের আকার দিয়েছে।

সেখানে পৌঁছাতে গেলে আপনাকে আপনার গাড়িটি আগেই পার্ক করতে হবে এবং নদীটি নৌকার দ্বারা পেরোতে হবে কারণ দ্বীপের মধ্যে গাড়ি ঢোকানোর কিন্তু অনুমতি নেই।

মৌসুনি দ্বীপ কিভাবে যাবেন?

মৌসুনি আইল্যান্ড পৌঁছাতে তিন ঘন্টা তিরিশ মিনিট লেগেছিল কলকাতা থেকে।

সাড়ে ৩ ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে সেই স্থানে পৌঁছালাম যেখান থেকে আমরা নদী পথে রওনা হব মৌসুনি আইল্যান্ড এর উদ্দেশ্যে।

কলকাতা থেকে মৌসুনি দ্বীপ এর দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। প্রায় ৩ ঘন্টা লাগে পৌঁছাতে।

ADVERTISEMENT

রাস্তার অবস্থা এবং ট্রাফিক জ্যাম উপর নির্ভর করে ৪ ঘন্টাও লাগতে পারে। আমরা গাড়ি থেকে নেমে গাড়ি পার্ক করলাম এবং নদীপথে দিয়ে পেরিয়ে গেলাম।

একসাথে কথা হাসি-আনন্দ গান সবকিছুই হচ্ছিল এবং উদ্দীপনাও সেরা ছিল। ক্যামেরার গ্যালারি এক এক করে ভরে যাচ্ছইল। আমরা একটি ছোট নৌকা নিলাম এবং ১০ মিনিট নৌকায় যাওয়ার পরে আমরা প্রধান দ্বীপে পৌঁছে গেলাম।

মৌসুনি দ্বীপ এর পৌঁছানোর পরে আমরা দুটো টোটো নিলাম এবং হোটেলের গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। টোটো তে মোটামুটি ১৫ মিনিট লেগেছিল এবং তারপর ৫ মিনিট হাঁটতে হয়েছিল হোটেলে পৌঁছানোর জন্য।

মৌসুনি দ্বীপে গিয়ে কোথায় থাকবেন?

দ্বীপে থাকার ২ধরণের জায়গা আছে। এক হলো কটেজ এবং আরেকটি হল তাবু।

আমাদের দুটো অপশন ছিল এবং তাই আমরা কটেজ বেছে নিয়েছিলাম।

একটি দালালের সাহায্যে বুকিং করে নিয়েছিলাম আগে থেকেই তবে আমি আপনাদের বলব একটি কটেজ রুম এক সপ্তাহ আগে থেকে বুক করে নিতে কারণ সঙ্গে সঙ্গে কটেজের রুম পাওয়া একটু অসুবিধা হয়ে যেতে পারে।

কটেজে থাকার ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ১৪০০ প্রতি রাত। আপনি কোন ঋতুতে যাচ্ছেন সেই অনুযায়ী এবং কেমন রুম খাবার নেবেন সেই বিশেষে।

তবে সত্যি বলতে কটেজগুলো ভীষণ আরাম দায়ক ছিল। যদিও আমি তাবুতে থাকেনি কিন্তু আমি বলতে পারি তাবুগুলো ভীষণ আরামদায়ক হতে পারত। তাবু ও কটেজ দুটোই কাঠের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল।

mousuni island
মৌসুনি দীপ

মৌসুনি আইল্যান্ড এ গিয়ে কি করবেন?

মৌসুনি আইল্যান্ড এ গিয়ে আপনি দেখতে পাবেন বালুরাশি দিয়ে ঢাকা সৈকত, লম্বা ডাব গাছ যেখানে সবুজ ডাব ধরে আছে, ঘন ঝাউ বন, নীলাম্বর যা নির্মল জলরাশি জুড়ে দিচ্ছে অনায়াসে, হামক এর উপর শুয়ে ক্লান্তি কাটাচ্ছে বহু মানুষ।

অনেকটা সময় আমি নিজেই হ্যামক এর উপর কাটিয়েছিলাম এবং ঘন্টার পর ঘন্টা প্রকৃতির সৌন্দর্যের দিকে চেয়ে থাকতাম। প্রকৃতির সুন্দর রুপকে ফ্রেমবন্দি করতাম এবং ভোজন রসিক হিসেবে সামুদ্রিক খাবার ও অনেক খেতাম।

ADVERTISEMENT

সবথেকে আনন্দময় ছিল দ্বীপের জলে খেলা করা। তবে জল এর নিচে মাটিটা ছিল একটু বেশি এঁটেল পিছল। যদিও অন্য জায়গা গুলো তে বালির পরিমাণ বেশি ও দূর বিস্তৃত।

দ্বীপের যে জায়গায় বেশি পিছল এবং কাদা ছিল সেই জায়গাতে সমুদ্র তথা বঙ্গোপসাগর এবং নদীটি মিলিত হয়েছিল।

খাবার কথা বললে বলে রাখি নানান রকম সামুদ্রিক মাছ এবং কাঁকড়া পাওয়া যাচ্ছিল এবং তা অসাধারণ স্বাদের ছিল।

এমনিতেও আমি সামুদ্রিক খাবার খেতে বেশি পছন্দ করি এবং ভাজা সামুদ্রিক মাছের স্বাদ ও গন্ধর কোন তুলনাই হয়না।

আমি অনেক রকমের সামুদ্রিক মাছ অর্ডার করেছিলাম খাবার জন্য যা আগে আমি কখনো খাইনি এবং সেই সামুদ্রিক মাছের পদ, কাঁকড়া তো ছেড়ে যাওয়ার কোন প্রশ্ন ছিলই না।

ঝাল দেওয়া, রসালো কাকড়া ও মাছের সাদা অংশ যেনো আমায় অন্য স্বর্গে পৌঁছে দিচ্ছিল। সত্যি বলছি এই খাবার খেতে আমি অন্তত কখনো হাপিয়ে উঠবনা।

mousuni island trees
মৌসুমী দ্বীপের গাছ

মৌসুমী দ্বীপে অনেক প্রকারের গাছ দেখতে পাবেন।

দ্বীপের চারিপাশে কাঠ দিয়ে ঘেরা ছাউনি এবং নারকেল পাতার ছাউনি দেখতে পাবেন এবং তারই তলায় কাঠের রাউন্ড টেবিল এবং তাকে ঘিরেই বেঞ্চে যে কেউ সেখানে বসে সামুদ্রিক খাবার উপভোগ করতে পারবেন।

আমার জন্য পারফেক্ট জায়গা হচ্ছে হ্যামক কারন আমি বরাবরই একটু ল্যাদখোর আমি। হ্যামক তখনই ছেড়ে যেতাম যখন আমি রাত্রেবেলা ঘুমাতে যেতাম, সারা সন্ধ্যে মৌসুনি দ্বীপ এই থাকতাম এবং আধার রাতে একটি প্রকৃতি কত সুন্দর হতে পারে সে যে উপভোগ করেছিলাম।

ADVERTISEMENT

সৈকতে একটু লাইট কিন্তু ছিল না। রাত্রি নামলেই চারিদিকটা ঘন কালো হয়ে যেত এবং আমরা ফোনের ফ্লাশ লাইট অন করতাম ও হালকা বেগুনি রংয়ের কাকড়া দেখার জন্য যেতাম।

এগুলি সন্ধ্যাবেলায় বেরিয়ে আসতো ও এই কাকড়া গুলি ভীষণ বড় ছিল এবং দেখতে ভীষণ সুন্দর ছিল।

মৌসুনি দ্বীপ বেড়াতে যাবার বিশেষ সময়

মৌসুনি দ্বীপ বেড়াতে যাবার বিশেষ সময় হচ্ছে ডিসেম্বর থেকে মার্চ।

এইটি স্বাভাবিকভাবে এক থেকে দুই দিনের ট্যুর যেখানে বিশেষ কিছু দেখার না থাকলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সমুদ্র সৈকতের ঠান্ডা হাওয়া দারুণভাবে অনুভব করবেন।

আমাদের ডের দিনের ট্যুর শেষ হয়েছিল সেই রাত্রেবেলা। তার পরের দিন সকালবেলা আমরা সমস্ত কিছু গুছিয়ে ফিরে এসেছিলাম বাড়ি।

আমাদের আবার টোটো নিতে হয়েছিল এবং আসতে হয়েছিল সেই স্থানে যেখানে আমরা নৌকায় চেপে নদী পার করব। অতএব আমাদের পৌঁছে দিয়েছিল পারকিং যোনে।

সময় দ্রুত চলছিল এবং আবার আমরা গাড়ি নিয়ে ঘর ফিরে এলাম। সময়টা যেন আলোর গতিবেগ চলে গেল।

সব থেকে সেরা জিনিস এটাই দেখলাম যে শহরের কাছাকাছি এমন একটা জায়গায় আছে যা শুধু গাছ দিয়ে ঘেরা।

ADVERTISEMENT

প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা এতটা সুন্দর অনুভূতি সত্যি বলতে আগে অনুভব করিনি কারণ ইঁট, কাঠ, পাথরের মোড়া শহরের মধ্যে আমরা চাপা পড়ে গেছি।

তবে ভেবেও ভালো লাগছে যে শহরতলীর কাছে এমন একটি মন ভালো করা জায়গা আছে যা চট করেই ঘুরে আসা যায়।


এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন