পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলা লাল মাটির জন্য বিখ্যাত। এই জেলাকে আমরা সকলেই লাল মাটির দেশ হিসেবে চিনি।
এছাড়াও এই জেলা শান্তিনিকেতন, বিশ্ব ভারতীয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও তার ঐতিহ্যর জন্যেও প্রচলিত।
এসব ছাড়াও শান্তিনিকেতনের কাছে একটি স্থান আছে যার নাম সোনাঝুরি। এই জায়গাটি একটি বিখ্যাত টুরিস্ট ডেস্টিনেশন হিসাবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।
এই জায়গাটি সপ্তাহের শেষে এক থেকে দু দিন কাটানোর জন্য একটি সুন্দর “উইকএন্ড ডেস্টিনেশন”।
সোনাঝুরির প্রধান আকর্ষণ একটি দুই দিনের মেলা বা হাট যাকে সোনাঝুরি হাট বা শনিবারের হাট বলা হয়।
আজে আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা সোনাঝুরি হাট এর সম্মন্দে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কলকাতা থেকে সোনাঝুরি যেতে কতক্ষন লাগবে
আমাদের সোনাঝুরি যাওয়ার প্ল্যান টা হঠাৎই হয়ে গেল। যেদিন প্ল্যান করলাম তার ঠিক পরের দিন ই বেরিয়ে পড়লাম এক সুন্দর উইকএন্ড এর জন্য।
কলকাতা থেকে সকাল ৭টায় বেরিয়ে ঠিক ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট লাগলো গাড়ি করে পৌঁছাতে।
এই প্রথমবার সোনাঝুরি যাচ্ছিলাম, উদ্দীপনে একদম শিখরে ছিল। আবার একটি নতুন জায়গা, নতুন আবিষ্কার এবং নতুন আনন্দের খোঁজ।
হ্যাঁ আমি ভীষণ উৎসাহিত ছিলাম।
কলকাতা থেকে সোনাঝুরি দূরত্ব প্রায় ১৮০ কিলোমিটার।
সোনাঝুরি হাট এর কাছে কোথায় থাকবেন
সোনাঝুরি পৌঁছানোর পর, দেখলাম সেই জায়গাটি সোনাঝুরি গাছ দিয়ে ভরা। এক অদ্ভুত দৃশ্য।
গাছের মাছ দিয়ে এক মাটির রাস্তা চলে যাচ্ছে। সেই রাস্তা দিয়ে অল্প এগোতেই আমাদের হোটেলটি চোখে পড়ল।
দেখে খুবই আরামদায়ক ও ঘরোয়া মনে হচ্ছিল। হোটেলের সামনে গাড়ি রেখে ভেতরে ঢুকলাম।
রুম গুলো ভালো আরামদায়ক ছিল ও বাইরের দৃশ্য টা অদ্ভুত ছিল। এসি রুমের ভাড়া ছিল দিনে ১২০০ টাকা।
আমাদের এই হোটেলটি সোনাঝুরি মেলা থেকে খুবই কাছে অবস্থিত ছিল।
সোনাঝুরি হাট থেকে কি কি কিনবেন
সোনাঝুরি মেলা মূলত একটি হস্তশিল্প মেলা। এই মেলার মূল আকর্ষণ ওখানকার স্থানীয় মানুষদের হাতে করা কাজ।
এই মেলাতে আপনি একতারা, হাতে বানানো গয়না, চামড়ার ব্যাগ শাড়ি কাঠের তৈরি ঘর সাজানোর জিনিস, চেয়ার ও অন্যান্য আরো সুন্দর জিনিস পেয়ে যাবেন।
সাথে হরেক রকমের “জাঙ্ক জুয়েলারি”, টেরাকোটার কাজের সুন্দর সুন্দর জিনিস, ইত্যাদিও এখানে রয়েছে।
এই মেলার আরেকটি অদ্ভুত জিনিস হলো আপনি এই সবকিছুই খুবই কম দামে পেয়ে যাবেন।
একটার পর একটা অভূতপূর্ব সুন্দর দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে চলেছিলাম। দৃশ্যটি ছিল সবুজ মাঠের মধ্যে একটি ছোট্ট গ্রাম যদিও আসলে সেটা ছিলনা।
সোনাঝুরি হাট এর সময়সূচি
সোনাঝুরি হাট এর কোন নির্দিষ্ট সময় বলে কিছু নেই এটি শনিবার সকাল একটা থেকে দুটো নাগাদ শুরু হয় ও সূর্যোদয় অব্দি চলে। সাথেই মেলা অখন রবিবার দিনও বসে।
হোটেল থেকে খাওয়া-দাওয়া সেরে হাঁটতে হাঁটতে প্রায় দুটো নাগাদ পৌছালাম এই মেলাতে।
আপনি যদি গাড়ি নিয়ে আসেন তাহলে চেষ্টা করবেন দুটোর মধ্যে পৌঁছে যাওয়ার। এরপর আস্তে আস্তে ভিড় বাড়তে শুরু হয়।
সোনাঝুরি হাট থেকে কি কি করবেন
দোকানদাররা নিজেদের জিনিসপত্র নিয়ে সোনাঝুরি গাছ কুল এর মাঝেই বসে ছিলেন।
সোনাঝুরি মেলাতে এমব্রয়ডারি শাড়ি সুন্দর কানের দুল গলার হার আরও অনেক রকমের হাতে গড়া গয়না ছিল। সাথে বিভিন্ন রকমের কাঠের কাজ করা জিনিস দেখতে পাচ্ছিলাম।
কেউবা সেখানে বসে ছবি আসছিলেন ও তা বিক্রি করছিলেন।
আস্তে আস্তে বিকাল হচ্ছিল সূর্য আস্তে আস্তে অস্ত যাচ্ছিল। তার সাথে সাথে আদিবাসী লোকেরা তাদের নৃত্য পরিবেশন করছিল।
আমরা তার পাশে বসেই ভাঁড়ের চা য়ে চুমুক দিচ্ছিলাম।
শীতল বাতাস ও সুন্দর পরিবেশের মাঝে অদ্ভুত শান্তির অনুভূতি পাচ্ছিলাম।
সুন্দর অভিজ্ঞতা যাবে কখনো উপভোগ করি নি।
সোনাঝুরি হাট থেকে প্রচুর হাতে গড়া জিনিস কিনেছিলাম। অন্যসব হস্তশিল্প মেলা বা হস্তশিল্পের দোকানের তুলনায় এখানে দাম অনেকটাই কম।
সোনাঝুরি হাট থেকে কি খাবেন
তাহলে এবার আসা যাক খাবারের দিকে। আহার ও ভোজনের কথা উঠলেই আমার মনে একটি তীব্র আবেগ ও আনন্দের সৃষ্টি হয়। খাবারের মধ্যে ছিল তাজা কুচোনো সবজি, মিঠাপানির মাছ, ভাত এবং দেশী ঘি।
একটি খাঁটি বাঙালি থালা আমাদের সামনে পরিবেশন করা হয়েছিল।
টেরাকোটার পাত্রের সমস্ত সাজানো পদ অভিনব লাগছিল এবং প্রত্যেকটি রান্নার গন্ধ নাকে ভেসে আসছিল। এরকম সাজানো বাঙালি খাবার সামনে পেলে যে কেউই চেটেপুটে খাবে।
আপনি যেকোন বাঙালি খাবার খেতে পারেন আপনার যেমন খেতে ইচ্ছে যাবে। সবথেকে সেরা ছিল স্লো -কুকড চিকেনের পদটি।
খেয়েদেয়ে রাতে ঘুমটা ও বেশ আরামদায়ক হলো সকালে উঠে শীতল হওয়ার এক অদ্ভুত অনুভূতি পাওয়া যাচ্ছিলো যা সাধারণত শহরে পাওয়া যায় না।
আমার মনে পড়ে সেই দিন একটি দোকানে কড়া চা খেয়েছিলাম যা সত্যি সাধে ভীষণ ভালো ছিল, মানে যাকে বলা হয় পয়সা উসুল।
কেনাকাটাও বেশ জমপেশ ছিল কারণ সেই স্থানে প্রতিটি জিনিসের দরদাম কম ছিল অন্যান্য তাঁত বাজারের তুলনায়।
সেইরাতে একটা লম্বা টান টান ঘুম দিয়েছিলাম আমাদের আরামদায়ক বিছানায় আর ভোর ভোর উঠে পড়েছিলাম বাইরের নির্মল শুদ্ধ বাতাস অনুভব করার জন্য যেটা আমরা শহরের আনাচে-কানাচে কোথাও পাই না।
এত সুন্দর একটি জায়গাতে সকালটা শুরু করলাম প্রাতঃভ্রমণ দিয়ে।
আমাদের ফিরে যাওয়ার কথা ছিল দুপুরবেলা তাই আমরা সমস্ত জিনিস গুছিয়ে নিয়ে ব্রেকফাস্ট এর জন্য বেরিয়ে পড়লাম।
একটি বাঙালি আহারের জন্য আমার মন কেমন করছিল আর সেইটি যেন মনে হলো এর থেকে ভালো জিনিস বোধহয় আর হয় না। আর কিছু কেনাকাটাও বাকি ছিল তাও সেরে ফেললাম।
যত বেশি আঁধার নামছিল শেষদিনের সমস্ত শখ-আহ্লাদ মন খুলে পূরণ করার চেষ্টা করছিলাম।
এইরকম উদ্দীপনা এবং আনন্দ আমি আগে কখনো হয়নি। চট করে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে আমরা আবার রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার জন্য।
আমরা হয়ত বেশি দিনের জন্য ওখানে ছিলাম না কিন্তু যতটুকু সময় কাটিয়েছি মনের প্রশান্তি ছিল উচ্চতর এবং প্রত্যেকটা সময় অনুভব করেছি, উপভোগ করেছি। শুধু তাই নয় জায়গা এবং সংস্কৃতি জানার সুযোগ পেয়েছিলাম।
একটি অভূতপূর্ব জায়গা ভালো, খাবার, সুন্দর সংস্কৃতি এবং একটি মনোরম জায়গা ভ্রমণের জন্য। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এত সুন্দর একটা জায়গা ঘুরবো হয়তো আগে আশা করিনি।
মানুষগুলো অত্যন্ত ভালো ছিল যারা আমাদের কি সুন্দর ভাবে স্বাগত করেছিলেন এবং তাদের ব্যবহার আমাদের মন ছুঁয়ে গেছিল।
আপনিও কোন একদিন পরিবার অথবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরে আসুন ও একটি সুন্দর ছুটি কাটিয়ে আসুন।
এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন
- গড় পঞ্চকোট (পুরুলিয়া) – কোথায় থাকবেন, কি কি দেখবেন জেনে নিন
- বড়ন্তি (পুরুলিয়া) পশ্চিমবঙ্গ – রিসোর্ট, ঘুরে আসার সেরা সময়
- হাওড়া জেলার ৮টি দর্শনীয় স্থান – পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ
- অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে ঘুরে দেখার ৭টি সেরা পর্যটন কেন্দ্র
- বেনারস শহরের ৭টি হিন্দু ধর্মীয় স্থান যেকানে আপনি ঘুরে আস্তে পারেন
- কলকাতার ৪টি বিখ্যাত হেরিটেজ ক্যাফে যেকানে আপনি ঘুরে আস্তে পারেন