অম্বিকা কালনা ১০৮ শিব মন্দির, যা নব কৈলাস মন্দির নামেও বলা হয়, পূর্ব বর্ধমান এবং পশ্চিমবঙ্গের অনেক পুরনো পুণ্যস্থান।
স্থানটি ১০৮ শিব মন্দির এর জন্য জনপ্রিয় যা একটি বড় উঠোন কে ঘিরে নির্মাণ করা হয়েছে।
মহাদেবকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রক্ষক হিসেবে বলা হয়, ভারতের বহু অঞ্চল থেকে সারাবছর অনেক ভক্তগণ আসে যারা মহাদেব কে ভক্তি সহ পূজা প্রদান করে।
শিবরাত্রির সময় পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারত থেকে বহু ভক্তের সমাগম হয় এই অম্বিকা কালনা মন্দিরে।
আজ এই আর্টিকেলেটির মাধ্যমে আপনি অম্বিকা কালনা ১০৮ শিব মন্দির নিয়ে যে বিষয়গুলি জানতে পারবেন সেগুলি হলো:
এবার চলুন বিষয়গুলি বিস্তারিত ভাবে জানা যাক…
অম্বিকা কালনা ১০৮ শিব মন্দিরের অবস্থান
অম্বিকা কালনা ১০৮ শিব মন্দির অবস্থিত ঠাকুরপাড়া কালনা পূর্ব বর্ধমান। কালনা রাজবাড়ী মাঠ এর কাছাকাছি গেলে আপনি ১০৮ শিব মন্দির অথবা মন্দিরে সন্ধান পেয়ে যাবেন।
অম্বিকা কালনা ১০৮ শিব মন্দির খোলা থাকার সময়
মন্দির প্রাঙ্গণ খোলা থাকে সকাল ৬টা থেকে ১২টা অব্দি ও বিকেল ৪টে থেকে ৮টা অব্দি।
শিবরাত্রির সময় বিশেষভাবে আয়োজন করা হয় ভক্তদের জন্য।
অম্বিকা কালনা ১০৮ শিব মন্দির কি ভাবে পঁচাবেন
পশ্চিমবঙ্গের যে কোনো জায়গা থেকে অম্বিকা কালনা ১০৮ শিব মন্দির যাত্রা করা খুব একটা কঠিন কিছু নয়।
আপনি যদি প্রাইভেট কার বা বাইক দ্বারা যেতে চান তাহলে আপনি মগ্রা ফ্লাইওভার দ্বারা যেতে পারেন অথবা ফ্লাইওভারের নিচে রূটটা দিয়ে কালনা পৌছাতে পারেন যার নাম কালনা কাটোয়া রোড ভাইয়া সপ্তগ্রাম ত্রিবেণী।
আপনি যদি ট্রেনে যেতে চান তাহলে কলকাতা শহর থেকে কালনা ৮০ কিলোমিটার দূরত্বে আছে।
আপনি সে ক্ষেত্রে হাওড়া কাটোয়া লোকাল ধরে যেতে পারেন এবং অম্বিকা কালনা স্টেশনে নেমে যেতে পারেন সেখান থেকে টোটো ধরে মন্দির পৌঁছাতে পারেন।
অম্বিকা কালনার ১০৮ শিব মন্দির বর্ধমান এর ইতিহাস
বলা হয় রানী বিষ্ণু কুমারী যিনি ছিলেন রাজা তিলক চান্দের বিধবা স্ত্রী ভগবানের দ্বারা স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন তাদের অঞ্চলে একটি শিব মন্দির বানিয়ে দেয়ার জন্য।
তারপরে মহারাজা তেয চন্দ্র বাহাদুর ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি নির্মাণ করেন কারণ বিষ্ণুপুরের রিয়াল এস্টেট এর ক্ষমতা তার হাতে চলে এসেছিল এবং সেটি ধুমধাম করে পালন করার উদ্দেশ্যে তিনি মন্দিরটি বানিয়ে ছিলেন।
অম্বিকা কালনা ১০৮ শিব মন্দির এর ব্যাপারে তথ্য
আগেই আমরা আর্টিকেলটিতে পড়েছি ১০৮ শিব মন্দির বা কৈলাস মন্দির একসাথে জুড়ে আছে আটচালা ইটের দ্বারা তৈরি।
১০৮ শিব মন্দির একটি অসাধারণ গম্বুজের সৃষ্টি করেছে যার একটি অভিনব সংখ্যাসূচক সমন্বয় আছে।
সমকেন্দ্রিক বৃত্তের ভিতরে মন্দিরগুলি অবস্থিত যেখানে বাহিরের বৃত্তে আছে ৭৪টি মন্দির এবং ভিতরে আছে ৩৪ টি মন্দির।
১০৮ আধ্যাত্বিক নম্বর যা হিন্দু পুরাণে জপমালা চিত্রিত করে। বাইরের বৃত্তে মন্দির গুলো তে বিকল্প ভাবে সাদা ও কালো শিবলিঙ্গ আছে।
একটি মন্দিরে কালো রং এর শিব লিঙ্গ আছে এবং পাশের মন্দিরটি সাদা রং এর শিব লিঙ্গ আছে। ভিতরের বৃত্তের মন্দিরগুলোতে সব শিবলিঙ্গ সাদা রংয়ের।
এই মন্দিরটিকে নবরত্ন মন্দির হিসেবে বলা হয় পুরাতন সময় এই মন্দিরগুলো ১২ জন পুরোহিত খেয়াল রাখতেন এবং তারা রোজ শিবলিঙ্গের আরাধনা করতেন মন্দিরের গায়ে রামায়ণ ও মহাভারতের শিলালিপি খোদাই করা আছে।
বলা হয় সাদা শিবলিঙ্গ ধীর স্থির ও ভোলা মহেশ্বর এর রূপ প্রকাশ করে এবং কালো শিবলিঙ্গ রুদ্র তথা ভগবান শিবের ক্রোধান্বিত রূপ বলা হয়।
বিকল্প ভাবে এই বিশ্বাস করা হয় যে সাদা ও কালো শিবলিঙ্গ আমাদের মানব চরিত্র এবং পৃথিবীর কথা প্রতিস্থাপনা করছে কারণ আমাদের বাইরের পৃথিবী যেখানে আমরা বসবাস করি সেইখানে পাপ, অন্যায়, কষ্ট, ত্যাগ ও কুকর্ম যেমন আছে তেমনই আছে বিলাসিতা, সুখ আনন্দ, প্রতিপত্তি, ভালো কর্ম, দান ও ধ্যান অর্থাৎ সুকর্ম।
কিন্তু ভেতরের মন্দিরে সাদা শিবলিঙ্গ আছে আমাদের হৃদয়ের অন্তরের অনুভূতি, মায়া, প্রশান্তি, প্রেম এবং সমস্ত পাপ নির্মূল করার ইচ্ছে প্রকাশ করে যা আমরা মহাদেবের চরণে প্রার্থনা দ্বারা করে থাকি। অতএব অন্তরে আমরা সবসময় চাই শান্তি ও আনন্দ ফুটে উঠুক।
অম্বিকা কালনার কর্তৃপক্ষরা ভীষণ ভালোভাবে মন্দির টিকে যত্ন করছেন এবং রক্ষা করছেন। মন্দির প্রাঙ্গণ অতীব সুন্দর সবুজ ঘাসে ঘেরা এবং বাগানে খুব সুন্দর ভাবে নানান রঙের ফুল ও ফুটে থাকতে দেখবেন।
আপনি যদি চান বছরের অন্যান্য সময় অথবা বিশেষভাবে মহা শিবরাত্রির সময় একবার অবশ্যই অম্বিকা কালনা মন্দিরে ঘুরে আসবেন দেবী গৌরী এবং মহেশ্বর এর কৃপা লাভ করার জন্য খুব সুন্দর সময় হচ্ছে শিবরাত্রি মন্দিরের চারিপাশে পরিবেশ দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন।
অম্বিকা কালনা ১০৮ শিব মন্দিরের কাছে দেখার মতো কিছু স্থান
অম্বিকা কালনা ১০৮ শিব মন্দির যদি জান তাহলে অবশ্যই আশেপাশের কয়েকটি বিখ্যাত জায়গা তথা মন্দির ঘুরে আসতে ভুলবেন না।
আপনি একবার অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন সর্বমঙ্গলা মন্দির, লালজী মন্দির এবং অবশ্যই কালনা রাজবাড়ি তে।
এফ.এ.কিউ
কালনা ১০৮ শিব মন্দির কখন খোলা থাকে?
সকাল ৬টা থেকে ১২টা অব্দি ও বিকেল ৪টে থেকে ৮টা অব্দি।
বর্ধমানে কতগুলি ১০৮ শিব মন্দির রয়েছে?
বর্ধমানে মঠ ২টি ১০৮ শিব মন্দির রয়েছে। একটি কালনা তে ও অপরটি বর্ধমান শহরের নবাবহাটের কাছে অবস্থিত।
কালনা ১০৮ শিব মন্দির কবে স্থাপন করা হয়েছিল?
কালনা ১০৮ শিব মন্দির ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা মহারাজা তেয চন্দ্র বাহাদুরের দ্বারা স্থাপন করা হয়েছিল।
এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন
- বেলুড় মঠে ঘুরে দেখার সেরা ৫টি স্থান ও মনুমেন্ট
- কলকাতায় প্রাতঃরাশ (ব্রেকফাস্ট) এর ৬টি সেরা জায়গা
- বোটানিক্যাল গার্ডেন (কলকাতা) | এজেসি বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন
- কলকাতায় ঘুরে দেখার ১২টি সেরা ঐতিহাসিক স্থান
- ১০টি জিনিস যার জন্য কলকাতা বিখ্যাত | কি কারণে কলকাতা জনপ্রিয়
- দেউলটি গ্রাম (হাওড়া) – পিকনিক স্পট, দর্শনীয় স্থান
এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন
- বেলুড় মঠে ঘুরে দেখার সেরা ৫টি স্থান ও মনুমেন্ট
- কলকাতায় প্রাতঃরাশ (ব্রেকফাস্ট) এর ৬টি সেরা জায়গা
- বোটানিক্যাল গার্ডেন (কলকাতা) | এজেসি বোস ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন
- কলকাতায় ঘুরে দেখার ১২টি সেরা ঐতিহাসিক স্থান
- ১০টি জিনিস যার জন্য কলকাতা বিখ্যাত | কি কারণে কলকাতা জনপ্রিয়
- দেউলটি গ্রাম (হাওড়া) – পিকনিক স্পট, দর্শনীয় স্থান