Skip to content

বেলুড় মঠ, হাওড়া – ইতিহাস, সময় ও এন্ট্রি ফি

বেলুড় মঠ, এই পবিত্র নামটি সবাই শুনে থাকবেন। পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত অপূর্ব আধ্যাত্বিক স্থান এই বেলুড় মঠ, রামকৃষ্ণ মিশনের সদর দপ্তর।

বেলুড় মঠে প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন স্বামী বিবেকানন্দ যিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসের একজন প্রধান শিষ্য ছিলেন।

বেলুড়ে হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত বেলুড় মঠ প্রত্যেক দিন হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটায়। শুধু বাঙালি নয়, অনেক রকমের মানুষ যারা বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী সর্ব বিশ্ব থেকে এই তীর্থস্থানে শান্তি উপভোগের উদ্দেশ্যে আসেন। যারা ধর্মে বিশ্বাসী নয় সেই মানুষজনও এই পবিত্র স্থানে পা রাখেন।

বেলুড় মঠের চারিদিকের নির্মল সৌন্দর্য শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রী সারদা দেবী, এবং স্বামী বিবেকানন্দকে উদ্দেশ্য করে প্রবর্তন করা হয়েছিল যেখানে তাদের ধ্বংসশেষ মন্দির অর্থাৎ পবিত্র গৃহে সংরক্ষন করা আছে।

বিশ্বের যেকোনো জায়গায় রামকৃষ্ণ মঠ বা রামকৃষ্ণ মিশনের কেন্দ্র স্থান বেলুড় মঠে অবস্থিত।

এই আর্টিকেলটিতে, আপনি বেলুড় মঠ সম্মন্দে নিম্ললিখিত বিষয়গুলি জানতে পারেন,

তাহলে চলুন এই বিষয়গুলি বিস্তারিত ভাবে দেখে নেওয়া যাক।

বেলুড় মঠের অবস্থান ও কিভাবে যাবেন

বেলুড় মঠ অবস্থিত হাওড়া জেলায় বেলুড়ে। হাওড়া থেকে উত্তর দিকে গেলে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে বেলুড় মঠ পড়বে।

আপনারা বাস, লোকাল ট্রেন বা ফেরি ব্যবহার করে বেলুড় মঠ পৌছাতে পারেন।

বাসের জন্য আপনাকে হাওড়া স্টেশন থেকে 51, 54 এবং 56 নম্বর বাস ধরতে হবে। এবং সেই বাস আপনাকে মঠের সামনে নামিয়ে দেবে।

গড়িয়া, ইএম বাইপাস, সাইনসিটি, এয়ারপোর্ট, দক্ষিণেশ্বর ও বালি এই সব জায়গা থেকে আপনি AC 50 বাস পেয়ে যাবেন।

হাওড়া স্টেশনের ও স্প্লানেডের মাঝে অনেক মিনি বাস পেয়ে যাবেন যেগুলি বেলুড় মঠ অবধি যায়।

লোকাল ট্রেনে যেতে গেলে আপনাকে হাওড়া থেকে বেলুড় মাঝে যেকোনো লোকাল ট্রেন ধরতে হবে এবং তাহলেই আপনি বেলুড় স্টেশনে নামতে পারবেন। বেলুড় মঠ থেকে বেলুড় স্টেশন মাত্র ২০ মিনিট সময়ে পৌঁছে যেতে পারবেন।

ফেরিতে যেতে গেলে দক্ষিণেশ্বর, বেলুর মাঠের ফেরি ধরতে পারেন অথবা কুঠিঘাট এবং বেলুড় মঠের ফেরি ধরতে পারেন। মোটামুটি ২০ মিনিট সময় লাগে এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে পৌঁছতে।

এছাড়া আপনারা কোন ট্যাক্সি বা ক্যাব বুক করে বেলুড় মঠ পৌঁছতে পারেন।

বেলুড় মঠের সময় ও এন্ট্রি ফি

অন্ততপক্ষে দু’ঘণ্টা সময় অতিবাহিত হয় এই বেলুড় মঠের পুরো চত্বরটি ঘুরে দেখতে।

আপনি যদি প্রেয়ার হল বা প্রধান মন্দিরের মধ্যে ধ্যানে বসতে চান তাহলে পুরো স্থানটির সৌন্দর্য দেখতে এবং অনুভব করতে আপনার তিন থেকে চার ঘন্টা লাগতে পারে।

মনে রাখবেন বেলুড় মঠে গেলে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। বেলুড়মঠে ঢোকার জন্য কোন এন্ট্রি ফি লাগে না। বেলুড় মঠ প্রত্যেক দিনই খোলা থাকে।

বেলুড় মঠ খোলা থাকার সময়

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরসকাল ৬:০০ – ১১:৩০ এবং বিকেল ৪:০০ – ৮:৩০
অক্টোবর থেকে মার্চসকাল ৬:৩০ -১১:৩০ এবং বিকেল ৪:০০-৮:০০

মিউজিয়াম খোলা থাকার সময়

রামকৃষ্ণ মিউজিয়ামটি মঙ্গলবার থেকে রবিবার অবধি খোলা এবং সোমবার এবং কয়েকটি পাবলিক হলিডেতে বন্ধ থাকে।

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরসকাল ৮:৩০-১১:৩০ এবং বিকেল ৪:০০ – ৬:০০
অক্টোবর থেকে মার্চসকাল ৮:৩০-১১:৩০ এবং বিকেল ৩:৩০-৫:৩০

বেলুড় মঠের সন্ধ্যা প্রার্থনার সময়

বেলুড় মঠের সন্ধ্যা প্রার্থনা বা সন্ধারতি দেখতে ভীষণ মনোরম লাগে।

সন্ধ্যে হলে মন্দিরের বাইরে ঘোরা নিষিদ্ধ এবং তাই একটি ঘন্টা বাজানো হয় যাতে সমস্ত দর্শকরা আরতি জন্য মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করে আরতির সময় হল বিকেল ৫:৩০।

বেলুড় মঠের ভোগ

আপনি বেলুড়মঠে ভোগ খেতে পারেন এবং এখানেই দুপুরের আহারা সারতে পারেন।

এবং তার জন্য আপনাকে সকাল সকাল আগাম বুকিং করতে হবে। সকাল ১১ টা থেকে ভোগ বিতরণ শুরু হয়।

অনেক মানুষ একসাথে বসে এখানে পবিত্র খিচুড়ি পায়েস ভোগ গ্রহণ করেন।

বেলুড় মঠের ইতিহাস

বেলুড় মঠের একটি মন্দির

রামকৃষ্ণ পরমহংস এবং স্বামী বিবেকানন্দ তাদের শিক্ষা, মানবকল্যাণ, দৃষ্টি সাধনার দ্বারা প্রচার করতে চেয়েছিল জনসাধারণের মধ্যে।

তাই স্বামী বিবেকানন্দ ও তার গুরু রামকৃষ্ণদেব তার দুই প্রধান সন্ন্যাসী দের নিয়ে ভারতবর্ষে মঠ নির্মাণের ভীত তৈরী করেছিলেন।

কলম্বো থেকে ফিরে এসে স্বামী বিবেকানন্দ এবং তার ২ বিদেশী শিষ্য জানুয়ারি ১৮৯৭, দুটি মঠের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি বেলুড়ে, যা পশ্চিমবঙ্গে, কলকাতার কাছে অবস্থিত এবং আরেকটি মায়াবতী, যা হিমালয়, উত্তরক্ষণ্ডে অবস্থিত।

এই মঠ নির্মাণের প্রধান কারণ ছিল যুবকদের এবং নবীন সন্ন্যাসী দের সন্ন্যাস ধর্মের সব রকম শিক্ষা ও জীবন যাপনের কথা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং এই সব শিক্ষার প্রচারে প্রধান মনীষী ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংস।

বেলুড় মঠের নির্মাণ শিল্প

বেলুড় মঠের নির্মাণশিল্প নিয়ে কথা বলতে হলে বলা যায় স্বামী বিবেকানন্দর দৃষ্টিশক্তি এত সুন্দর একটি স্থাপত্য গড়ে উঠেছে বাংলার বুকে স্বামী যখন আমেরিকা ও ইউরোপের মতো বিদেশে ঘুরতে তখন তিনি নানান স্থাপত্যের কাজ নজরবন্দী করতেন।

গো থীক, মীডিভাল, রেনেসাঁ, দ্যোরিক মর্ডান সব রকম নির্মাণ শিল্পের কাজ তার মনে বেলুড় মঠের নির্মাণ এর ব্যাপারে প্রভাব ফেলেছিল।

এ ছাড়াও বিবেকানন্দ তাজমহল, ফতেপুর সিক্রি, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্ণাটক ওড়িশার মত সুন্দর কারু কার্যের মন্দির দেখে প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং সেই থেকে তার বেলুড় মঠ শিল্প কার্য নিয়ে এগিয়ে ছিলেন। স্বামী ভিজনন্দন যিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিলেন, পরবর্তীকালে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন এবং তিনি এই মন্দিরটি নির্মাণ শিল্প নকশা করেছিলেন।

এই রামকৃষ্ণ মঠ বানানো হয়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণের পবিত্র ধ্বংসশেষের উপর এবং বেলুড় মঠের ভীত স্বামী শিবানন্দ তৈরি করে দিয়েছিলেন ১৬ই মে ১৯৩৫ শালে। মার্টিন বার্ন অ্যান্ড কোম্পানি এই বিশাল আকৃতির নির্মাণ কার্য সম্পন্ন করেছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশন এই স্থাপত্য কে “সিম্ফোনি অফ আর্কিটেকচার” বলে আখ্যা দিয়েছেন।

শ্রীরামকৃষ্ণের মঠটি চুনাপাথর এবং কংক্রিট দিয়ে তৈরি যার উচ্চতা ১১২.৫ ফুট এবং মন্দিরটি ৩২,৯০০ স্কয়ার ফিট এর উপরে তৈরি করা হয়েছে। কিছুটা বৌদ্ধ স্তুপা থেকে অনুপ্রাণিত এই মন্দিরের স্ত্যপত্য।

মঠের সেন্ট্রাল ডোম টি বা গম্বুজটি বানানো হয়েছে ইউরোপিয়ান রেনেসাঁ থেকে এবং মন্দিরের মেঝে হলিক্রস এর অনুরূপ। হ্যাঙ্গিং বেলকনি এবং জানলা মুঘল রাজস্থানী আর্কিটেকচার এর মেলবন্ধন।

নাট মন্দির যেটি প্রধান মন্দিরের সাথে যুক্ত সেটি রোমের সেন্ট পিটার চার্চ এর অনুরূপ। গ্রিক এবং দোরিক পিলার দিয়ে পুরো হলঘরটি বাঁধানো আছে।

এ ছাড়া হিন্দু দেবতাদের যেমন হনুমান এবং গণেশের মূর্তি প্রধান দরজার পিলারের উপর খোদাই করা আছে যা চিত্রিত করে শক্তি এবং সাফল্য।

বেলুড় মঠের কাছাকাছি কোথায় থাকবেন

আপনি বেলুড়,বালি, হাওড়া বা দক্ষিণেশ্বরের এর কাছাকাছি কোন হোটেল নিতে পারেন কারণ এইসব স্থান থেকে ফেরিঘাট এবং বেলুড়মঠ থেকে খুব একটা দূর নয়।

এসব জায়গা থেকে সহজেই টোটো, বাস, লোকাল ট্রেন এসব যান পাওয়া যায়।

তাহলে এই সব স্থান থেকে আপনি খুব সহজেই পৌঁছে বেলুড় মঠের চারিপাশ, গঙ্গা, ভোগ গ্রহণ, পূজা ও আরতি ভালোভাবে দর্শন করতে পারবেন।

বেলুড় মঠ গেলে আপনি মনের প্রশান্তি খুঁজে পাবেন। এই মঠ সর্বদা শ্রীরামকৃষ্ণ, সারাদা মা ও স্বামী বিবেকানন্দর কথা ও ভাবনাকে অনুসরণ করে চলে। তাই কোন রকম জাত পাতের ও ভেদাভেদ এই মিশনে বা মঠে দেখা যায় না।

বেলুড় মঠ জনকল্যাণে সম্পূর্ণ ভারত এবং বিশ্বে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। শুধু তাই নয় দানছত্র, স্কুল, আর্ট কলেজ সবকিছুই খুলেছে বেলুড় মঠের সংস্থা।

তাই আপনারাও যদি বেলুড় মঠ গিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই শান্তি বজায় রাখবেন এবং বিশেষত ঘুরে আসবেন উৎসবের দিন গুলিতে।

বেলুড় মঠ গেলে অবশ্যই জীবনের অনেক অজানা এবং নতুন মানে খুঁজে পাবেন।


এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন