Skip to content

১০টি জনপ্রিয় বাংলা মিষ্টি | পশ্চিমবঙ্গের কিছু বিখ্যাত মিষ্টি

একটি মন ভরা ভোজনের পরে, বাঙ্গালীর পাতে মিষ্টি এক আবশ্যক ও অপূর্ব বিকল্প। বাঙালিরা মিষ্টির ভক্ত এবং আমার মতে বাঙালি মিষ্টি যেকোনো সেরা মিষ্টান্ন কে টেক্কা দিতে পারে।

একজন শিশু থেকে একজন বৃদ্ধ পর্যন্ত, প্রত্যেকের কাছে মিষ্টি ভীষণ পছন্দের হয়। সকল বিশেষ অনুষ্ঠান এবং পূজায় মিষ্টির প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

ADVERTISEMENT

এই রাজ্যের মিষ্টি প্রস্তুতকারীরা তাদের তৈরি প্রতিটি ধরণের মিষ্টি সম্পর্কে সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী। প্রত্যেকটির মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয় এবং প্রত্যেকটি মিষ্টি শব্দটি তাদের উপকরণ দ্বারা সত্যই ভালভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।

ময়রা জানে ঠিক কোনো মিষ্টি কিভাবে তৈরী করা হয় এবং তাই তার গুণমানটি দুর্দান্ত। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিখ্যাত রসগোল্লা থেকে শুরু করে মেচা সন্দেশ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি রয়েছে, তালিকার শেষ নেই।

বাংলার মিষ্টি প্রায়ই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং সারা বিশ্বে রপ্তানি করা হয়।

এই নিবন্ধে আপনি পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে জনপ্রিয় যে জনপ্রিয় মিষ্টিগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন সেগুলি হলো,

  1. মোরোব্বা
  2. ল্যাংচা
  3. ক্ষীর দই
  4. সরভাজা
  5. মোয়া
  6. সিতাভোগ-মিহিদানা
  7. রসগোল্লা
  8. জলভরা তালসাঁস সন্দেশ
  9. খিরপাই বাবরশাহ
  10. ম্যাচা সন্দেশ

তাহলে চলুন এইগুলি একটু বিস্তারিত ভাবে দেখে নেওয়া যাক।

১. বীরভূমের মোরব্বা

morobba sweet
মোরব্বা

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলা, এই বিশেষ ধরনের মিষ্টির জন্য বেশ বিখ্যাত। এটি “মোরোব্বা” নামে একটি পরিচিত ফল দিয়ে তৈরি করা হয়।

শুধু বাংলায় নয়, ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বীরভূম থেকে “মোরব্বা” রপ্তানি করা হয়।

ADVERTISEMENT

আম, কমলা, বেল, পেঁপে, আনারস এবং আরও অনেক মৌসুমি ফল দিয়ে তৈরি বিভিন্ন জাতের মোরোব্বার বিভিন্ন স্বাদ রয়েছে।

মোরব্বা তে চিনি ছাড়া কোনো সংরক্ষক মেশানো হয় না।

২. শক্তিগড়ের ল্যাংচা

Lyangcha sweet bengal
ল্যাংচা (Sumitsurai, CC BY-SA 3.0, via Wikimedia Commons)

শক্তিগড়ের ল্যাংচা বাংলার একটি বিখ্যাত মিষ্টি। শক্তিগড় পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলায় অবস্থিত।

এই বিশেষ মিষ্টি এলাকার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা বংশানুক্রমে তৈরি করে থাকে। তাই তারা নিজেদের মিষ্টি তৈরি ও বিক্রির কেন্দ্র হিসেবে “শক্তিগড়” বেছে নিয়েছে।

এই মিষ্টি শুধু পশ্চিমবঙ্গের সাথে সাথে সারা বিশ্বে রপ্তানি করা হয় এবং এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

মিষ্টিটি মিহি ময়দা, পরিশোধিত তেল, চিনির সিরাপ, দুধের গুঁড়া, ছানা, এবং খোয়া ক্ষীর দিয়ে তৈরি করা হয়। সাইজের উপর ভিত্তি করে ল্যাংচা বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে।

ইতিহাস জুড়ে, অনেক সেলিব্রিটি, এমনকি মহানায়ক উত্তম কুমার ল্যাংচা মিষ্টির দোকানে গিয়েছিলেন এবং এই মিষ্টির দুর্দান্ত স্বাদ উপভোগ করেছিলেন।

এই এলাকার বেশিরভাগ মিষ্টির দোকান জাতীয় সড়কের ধারে। তাই লোকেরা তাদের যাত্রা পথে সুস্বাদু ল্যাংচা উপভোগ করতে পারেন।

৩. নবদ্বীপের ক্ষীর দই

ক্ষীর দই (Ami.bangali, CC BY-SA 4.0, via Wikimedia Commons)

নবদ্বীপের দই পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বিখ্যাত দই হিসাবে পরিচিত। এটি পশ্চিমবঙ্গের আরেকটি সবচেয়ে বিখ্যাত মিষ্টি, যার উৎপত্তি নদীয়া জেলায় অবস্থিত নবদ্বীপে।

এটি “ক্ষীর দোই” নামে পরিচিত।

ADVERTISEMENT

এই দইটির বিশেষত্ব হল এটি দুধকে অবিরাম ফুটিয়ে তৈরি করা হয়, যা ধীরে ধীরে দইতে পরিণত হয়। দইয়ের মধ্যে ক্ষীরের একটি পুরু স্তর থাকে যার কারণে এই মিষ্টি খেতে বেশ ভালো লাগে।

নবদ্বীপ লাল দই প্রায় ১৫০ বছর পুরোনো।

৪. কৃষ্ণনগরের সরভাজা

সরভাজা (Biswarup Ganguly, CC BY 3.0, via Wikimedia Commons)

পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় অবস্থিত কৃষ্ণনগরের একটি বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত মিষ্টি হল সরভাজা।

এটি “সর” এবং “ক্ষীরের” স্তর দিয়ে তৈরি হয় যার মধ্যে কিশমিশ, কাজু এবং পেস্তা রয়েছে। তাই এই মিষ্টির স্বাদ মসৃণ, ক্রীম যুক্ত এবং নরম।

মিষ্টিটি প্রথমে তৈরী করেছিলেন কৃষ্ণনগরের এক মিষ্টির দোকানের মালিক অধর চন্দ্র দাস। এই মিষ্টির প্রাচীনতম দোকান হল অধর চন্দ্র দাস অ্যান্ড সন্স।

৫. জয়নগরের মোয়া

জয়নগরের মোয়া (Biswarup Ganguly, CC BY 3.0, via Wikimedia Commons)

জয়নগরের মোয়া হল বাংলার একটি মৌসুমী মিষ্টি খাবার যা প্রথম ১৯৭৮ সালে তৈরি করা হয়েছিল। এটি দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় অবস্থিত একটি শহর জয়নগরে প্রথম তৈরি হয়েছিল।

এই মিষ্টির প্রধান উপকরণগুলি হল নতুন খেজুরের গুড়, কনক চুরা খোয়া, খোয়া ক্ষীর, এবং ঘি। কাজুবাদাম, এলাচ গুঁড়া এবং কিশমিশ দিয়ে উপরের ভাগ সাজানো থাকে।

ADVERTISEMENT

এই মিষ্টি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশ ও আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।

জয়নগরের মোয়া সাধারণত কিলোগ্রামে বিক্রি হয়। কখনও কখনও একটি বড় মোয়া তৈরি করা হয় যাকে জাম্বো মোয়া বলা হয় যা সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহার দেওয়া হয়।

৬. বর্ধমানের সিতাভোগ-মিহিদানা

Sitabhog-Mihidana bengali sweet
সিতাভোগ-মিহিদানা (বাক্যবাগীশ, CC BY-SA 4.0, via Wikimedia Commons)

বর্ধমানের সীতাভোগ-মিহিদানা মুখে জল আনা একটি বিখ্যাত বাঙালি মিষ্টি যা সারা বিশ্বে বিখ্যাত।

ভাইসরয় লর্ড কার্জন যখন প্রথম বর্ধমানে আসেন তখন এই মিষ্টিটি প্রথম বানানো হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তাকে প্রভাবিত করার জন্য তখনকার রাজা বিজয় চন্দ্র মাহাতাব ও বৈরব চন্দ্র নাগ মিষ্টিটি প্রথম বানিয়ে ভাইসরয়কে উপহার দেন।

সীতাভোগের উপাদান হল গোবিন্দভোগ চালের আটা এবং ছানা ডালডা যা ঘিতে ভাজা এবং চিনির সিরায় ডুবিয়ে রাখা হয়।

বর্ধমানে সীতাভোগ এবং মিহিদানা উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো স্বাদের হয়।

৭. কলকাতার রসগোল্লা

রসগোল্লা (Nupur Das Gupta, CC BY 2.0, via Wikimedia Commons)

কলকাতার রসগোল্লা ভারত ও সারা বিশ্বে একটি বিখ্যাত মিষ্টি। এটি বাংলার সবচেয়ে সাধারণ এবং জনপ্রিয় মিষ্টিও বলা হয়ে থাকে।

এটি প্রথম নবীন চন্দ্র দাস তৈরি করেছিলেন এবং ১৮৬৮ সালে তাঁর স্ত্রী ক্ষীরোদমনি দেবীকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি সবসময়ই বড় মাপের ময়রা হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রসগোল্লা তৈরিতে সফল হওয়ার আগে তিনি অনেকবার ব্যর্থ হয়েছেন।

ADVERTISEMENT

খাঁটি ছানা দিয়ে তৈরি করে চিনির সিরাপে ডুবিয়ে রাখা রসগোল্লা বাঙালিদের প্রতিটি বড় এবং ছোট অনুষ্ঠানে একটি সাধারণ তবু অসাধারণ মিষ্টি।

৮. চন্দননগরের জলভরা তালসাঁস সন্দেশ

জলভরা তালসাঁস সন্দেশ

হুগলি জেলার চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের জলভরা তালসাশ সন্দেশ তার অনন্যতা এবং আশ্চর্যজনক স্বাদের জন্য বিখ্যাত।

সূর্য কুমার মোদক মিষ্টির দোকান জলভরা তালসাশ সন্দেশের জন্য বিখ্যাত।

প্রায় ২০০ বছর আগে সম্ভবত ১৮১০ সালে এই মিষ্টি আবিষ্কৃত হয়েছিল।

মিষ্টিটি “নোলেন গুর সিরাপ” ভরাট করে একটি বিশেষ ধরনের ঢালাই দিয়ে তৈরি করা হয়। এই মিষ্টির অনন্য স্বাদ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল, এমনকি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও অনেক মিষ্টি প্রেমিককে আকর্ষণ করে।

৯. খিরপাই বাবরশাহ

খিরপাই বাবরশাহ

খিরপাই বাবর্শা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খিরপাই শহরে তৈরি একটি জনপ্রিয় মিষ্টি।

এই মিষ্টির প্রধান উপাদান হল মিহি আটা, খির এবং দুধ। আগে এটি উপরে মধু দিয়ে পরিবেশন করা হত। কিন্তু বর্তমানে এই প্রবণতা প্রায় অচল।

ADVERTISEMENT

এটি একটি বিশেষ ধরনের ছাঁচ দিয়ে তৈরি করা হয়।

এই মিষ্টি প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো। এটি দিল্লির সম্রাট বাবরকে দেওয়া হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তখন থেকেই এই মিষ্টির নাম হয় বাবর্শা।

১০. বাঁকুড়ার ম্যাচা সন্দেশ

ম্যাচা সন্দেশ (BengaliHindu, CC BY-SA 4.0, via Wikimedia Commons)

বাঁকুড়ার বেলিয়াতোরের মেচা সন্দেশও একটি বিখ্যাত মিষ্টি।

যামিনী রায়, বসন্ত রঞ্জন রায়ের মতো শিল্পীদের যুগে তৈরি করা হয় এই মিষ্টি। এটি ছোলার ডালের বেসন, এবং অন্যান্য এলাচ গুঁড়া, কাজুবাদাম গুঁড়া, ঘি, খোয়া এবং চিনি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।

এটি বংশগতভাবে তৈরি এবং একটি পারিবারিক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।

মিষ্টি বিক্রেতারা তাদের মিষ্টির খাঁটি গুণমান নিশ্চিত করতে এবং তাদের মিষ্টিকে সংযোজনমুক্ত দাবি করতে সরকারের কাছ থেকে জিআই মর্যাদা পেতে চায়।

এগুলি পশ্চিমবঙ্গের কিছু জনপ্রিয় মিষ্টি। এছাড়াও এই রাজ্যে আপনি পেতে পারেন এমন অনেক নামকরা মিষ্টি।

মানুষ সবসময় মিষ্টি খেয়েই ভোজন শেষ করতে ভালোবাসে। হরেক রকমের মিষ্টি বাঙালির ঐতিহ্য এবং  একানে ছোট গ্রাম থেকে বড় মেট্রো সিটির প্রায় সবাই একপ্রকার তীব্র মিষ্টি প্রেমী।

আপনি পশ্চিমবঙ্গের যেখানেই যান, সব জায়গায় আপনি বৈচিত্র্য, ভিন্নতা পাবেন শুধু স্বাদেই নয় উপাদান এবং গঠনেও। বিভিন্ন স্বাদের মানুষের জন্য কখনও কখনও বিভিন্ন স্বাদ ব্যবহার করা হয়।

এখানকার লোকেরা জানে কীভাবে তাদের আশ্চর্যজনক মিষ্টি দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হয়। এই রাজ্যে যে মিষ্টি তৈরি হয় তাতে বাঙালিরা খুব খুশি ও গর্বিত।


এরকম আরো রেসিপি দেখুন