Skip to content

জয়রামবাটি মাতৃ মন্দির, বাঁকুড়া – সময়সূচি, ইতিহাস

জয়রামবাটি একটি সুন্দর মনোরম গ্রাম পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলায়, যে স্থানে জগৎ মাতা সারদা দেবী জন্মেছিলেন।

এই গ্রাম একটি পুণ্যস্থান বলা হয় কারণ সারদা দেবী এখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং এই স্থানে মা সারদার নামে একটি বড় মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে।

আজ এই আর্টিকেলটি পরে আপনি জানতে পারবেন,

চলুন এই বিষয়গুলি বিস্তারিত ভাবে দেখা যাক…

জয়রামবাটির ইতিহাস

Matri Mandir Gate

জয়রামবাটি ইতিহাস খতিয়ে দেখলে আমরা জানতে পারি এখানে মা সারদার পিতা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভিটে ছিল।

যখন তার ৯ বছর বয়স এই পৈতৃক ভিটে থেকেই সারদা মায়ের সাথে রামকৃষ্ণদেবের বিবাহ হয়।

তাই এই মন্দির অর্থাৎ জয়রামবাটি মন্দির স্বামী সারদানন্দ, সারদা দেবীর নামে উৎসর্গ করেছিলেন বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিন যা ছিল অক্ষয়তৃতিয়ার দিন।

দিনটি ছিল ১৯২৩ শালের, ১৯ এ এপ্রিল এবং জয়রামবাটি মন্দির নামকরণ হয়েছিল শ্রীশ্রী মাতৃমন্দির বলে।

জয়রামবাটি মাতৃমন্দিরের সময়সূচি

শ্রীশ্রী মাতৃমন্দির তথা জয়রামবাটি মন্দিরের সময়সূচী নিচে দেওয়া হল।

এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর:

সকাল৬:৩০ -১১:৩০
বিকেল৪:০০ – ৮:৩০

অক্টোবর-মার্চ:

সকাল৪:৩০ -১১:৩০
বিকেল৩:৩০ – ৮:৩০

জয়রামবাটি মাতৃ মন্দিরে কিভাবে পৌঁছাবেন

আপনি কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো স্থান থেকে গাড়ি, বাস এবং ট্রেনের মাধ্যমে সহজেই জয়রামবাটিতে পৌঁছাতে পারেন।

বাসে করে:

কলকাতা থেকে জয়রামবাটির দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। এসপ্ল্যানেড থেকে আপনি সহজেই বাস পেতে পারেন। SBSTC কলকাতা বিষ্ণুপুর বাস কলকাতা থেকে জিরামবাটি হয়ে দিনে দুবার চলে।

আপনি জিরামবাটিতে নেমে টোটো বা অটো নিয়ে জয়রামবাটি মাতৃ মন্দিরে পৌঁছাতে পারেন।

গাড়ী করে:

এছাড়াও আপনি ক্যাব বা নিজের গাড়িতে কলকাতা থেকে জয়রামবাটি পৌঁছাতে পারেন। NH19 হয়ে সেখানে পৌঁছাতে প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লাগে। ক্যাবগুলি সাধারণত ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা পর্যন্ত চার্জ করে।

ট্রেনে:

আপনি হাওড়া থেকে গোঘাট পর্যন্ত পরিষেবাতে থাকা ট্রেনগুলি পেতে পারেন। আপনি গোঘাটে নেমে জয়রামবাটিতে মাতৃ মন্দিরে যাওয়ার জন্য একটি অটো বা টোটো ভাড়া করতে পারেন। মাতৃমন্দির থেকে গোঘাটের দূরত্ব প্রায় ৬ – ৭ কিলোমিটার।

মাতৃ মন্দির ও আসে পাশের দর্শনীয় স্থান

জয়রামবাটি মন্দির ছাড়াও অনেক জায়গা আছে দেখার মত।

নিচে কয়েকটি লিস্ট দেওয়া রইল যেগুলো আপনি দেখতে পারবেন মাতৃ মন্দিরের আশেপাশে এবং জয়রামবাটি গ্রামের:

  1. পুরাতন বাড়ি
  2. নতুন বাড়ি
  3. পুণ্য পুকুর
  4. মায়ের দীঘি
  5. অমদার ঘাট
  6. সিংহবাহিনী মন্দির
  7. ধর্ম ঠাকুরের মন্দির
  8. বারুজ্জ পুকুর
  9. ভানু পিসির ঘর

আপনি প্রত্যেকটি জায়গার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই লিংক এ ক্লিক করে

যদিও আমরা জয়রামবাটি ভ্রমণের সময় সমস্ত পুণ্যস্থান ভ্রমণ করতে পারিনি তবে আমরা ভোরবেলায় বেরিয়ে মাত্রি মন্দির গিয়েছিলাম এবং সারদা মায়ের পুরাতন বাড়িতে গেছিলাম যা মাতৃ মন্দিরের পাশেই অবস্থিত।

মা সারদার পুরোনো কুটির

শ্রী শ্রী মাত্রী মন্দির পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম।

এপ্রিলের ৮ তারিখ একটি ভীষণ সুন্দর শ্বেতপাথরের একটি বিগ্রহ রাখা হয়েছিল সারদা মায়ের মন্দিরের সেই জায়গাতেই যেখানে সারদামা জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

একটি বড় প্রাসাদ ঘর আছে মাতৃ মন্দিরের সংযুক্ত। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এবং বেলুড় মঠ এই মাতৃ মন্দিরটির দেখাশোনা করেন।

শ্রী শ্রী মাতৃ মন্দির

সারদা মায়ের পুন্য আহুতি গর্ভগৃহ মন্দিরে সংরক্ষণ করা আছে যেখানে ভক্তরা তাকে প্রায় প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয় এবং একটি ছোট শিবলিঙ্গ আছে যেখানে অর্ঘ্য প্রদান করে আরাধনা করে।

বিবেকান্দ সন্ন্যাসীদের একটি মন্দির এবং অন্যান্য অনাথ ছেলদের স্কুল চালিত হয় সন্ন্যাসীদের দ্বারা।

এই গ্রামে আছে আর একটি নারায়ন মন্দির যেখানে ৫ বছরের নীচে একটি শিশু নারায়নের আরাধনা করে।

শ্রী সারদা দেবী মাতৃ মন্দিরে বিবেকানন্দর একটি বিগ্রহ আছে।

জগৎমাতা এবং শ্রীরামকৃষ্ণ ধর্মীয় ও অলৌকিক ধ্যান ও ধারণার জন্যে সারদামণি জন্মগ্রহণের পরে সেই জয়রামবাটি গ্রাম শস্য-শ্যামলা হয়ে উঠেছিল, যেই গ্রাম তাঁর জন্মের আগে সমৃদ্ধিশালী ছিলনা।

মাতৃ মন্দিরে বিবেকানন্দের বিগ্রহ

চাষের কাজের জন্য মায়ের দীঘি বা আহের থেকে জল আনার ব্যবস্থা করা হয়।

জানা গেছে গ্রামের সব মানুষ এবং ভক্তরা জয়রামবাটি এসে এই পূর্ণ স্থানে স্নান করেন মনকে এবং শরীরকে কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য।

সারদা মা ছোটবেলায় এই সরোবর থেকে গলা অবধি জলে নেমে নিজেদের গাই ও গরুর জন্য ঘাস কেটে তাদের খাওয়াতো।

সম্প্রতি দামোদর থেকে ইলেকট্রিক পাম্প দ্বারা এই পুকুরের জল আসে।

জয়রামবাটি গ্রাম অত্যন্ত সুন্দর এবং স্বচ্ছ বাতাস বয়ে চলেছে আমদা নদীর ওপর যা এক পবিত্র মেজাজ সৃষ্টি করে।

প্রধান মন্দির ছাড়া ভক্তরা আরেকটি জলস্থান যেতে পারে যার নাম মায়ের গঙ্গা,যা অবস্থিত বাস স্ট্যান্ডের উল্টোদিকে। এছাড়াও আপনি যেতে পারেন পুন্যি পুকুর এবং তুতেলারি মন্দির।

গ্রাম্য আকাশ, বাতাস, গাছপালা আপনার চোখে একটি শান্তির সৃষ্টি করবে যতদূর আপনার চোখ যাবে। স্বচ্ছ আকাশ দেখে আপনার মন ভরে যাবে এবং জয়রামবাটি অসাধারণ সৌন্দর্য আপনাকে আকর্ষণ করবে বারংবার।

গ্রামের মধ্যে একটি পুরনো দিনের মায়া আছে এবং চারিপাশের ছোট ছোট মন্দির গুলো অসাধারণ দৃশ্য আপনার স্মৃতিপটে চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

এই গ্রামের সবথেকে প্রধান জিনিস হচ্ছে সংস্কৃতি সারদা মায়ের জীবনে সুন্দরভাবে বোনা আছে।

সারদা মায়ের মানব জাতির প্রতি দয়া, মায়া, যত্ন, দান ত্যাগ ধারাবাহিক ক্রমে বহু মানুষ দেখেছে জয়রামবাটিতে এবং তাই জয়রামবাটি একটি পুণ্যস্থান হয়ে উঠেছে ধীরে ধীরে।

আপনার জয়রামবাটি – কামারপুকুর ভ্রমণের অংশ হিসাবে আপনি জয়রামবাটিতে শ্রী শ্রী মাত্রী মন্দির ঘুরে আস্তে পারেন।

এই আধ্যাত্মিক মন্দিরটি অবশ্যই আপনার আত্মাকে উজ্জীবিত করবে এবং আপনার জীবনকে আশীর্বাদে পূর্ণ করবে।


এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন