জলপাইগুড়ি হল সিকিম-দার্জিলিং হিমালয় এবং গাঙ্গেয় সমভূমির মধ্যে একটি সংকীর্ণ বিস্তৃত ভূমি। ১৮৬৯ সালে ব্রিটিশ ভারতের সময় এই জেলাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই জেলাটি বিস্ময় এবং রোমান্টিকতা উভয় অনুভূতির সৃষ্টি করে বহু পর্যটকদের মধ্যে। তাই এই জেলা বহ পর্যটকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এখানে অনেক সুন্দর গ্রাম এবং শহর রয়েছে যা আপনি ঘুরে দেখতে পারেন।
বহু ছোট ও খরস্রতা নদী গিরিখাত থেকে বেরিয়ে আসার পর এই জায়গায় এসে মিলিত হয়। এখানে চোখে পড়বে বনের বিস্তীর্ণ অংশ, সীমাহীন সবুজ চা বাগান, এবং হিমালয়ের মনোরম দৃশ্য। বলা বাহুল্য এই এমন কয়েকটি বিশেষ স্থান, ব্রিটিশদের এই ভূমির দিকে গভীর ভাবে আকর্ষণ করেছিল।
এই নিবন্ধে, আপনি জলপাইগুড়ি ডিস্ট্রিক্টে দেখার জন্য নিম্নলিখিত স্থান এবং আকর্ষণগুলি সম্পর্কে জানতে পারবেন,
তাহলে চলুন এই জায়গাগুলি বিস্তারিতভাবে দেখে নেওয়া যাক।
১. জলপাইগুড়ি শহর
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৪৪ কিলোমিটার |
শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৪৬ কিলোমিটার |
জলপাইগুড়ি একটি সুন্দর পাহাড়ি শহর জেক ডাকনামে “অলিভ টাউন” ও বলা হয়। এই নামের উৎপত্তি প্রায় ১৯ দশকে যখন এই অঞ্চলটি বেশ কয়েকটি সমৃদ্ধ জলপাই বাগানের আবাসস্থল ছিল।
শহরটি বেশ কয়েকটি ছোট এবং সুন্দর নদী দিয়ে ঘেরা এবং চারপাশে রয়েছে এক স্নিগ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বেড়াজাল। এগুলি ছাড়াও, আপনি চা বাগানের অন্তহীন দৃশ্যও দেখতে পারেন, যা এই চিত্তাকর্ষক যাত্রাপথের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
এছাড়াও এই শহরে আছে শপিং মল, বাজার, বন্যপ্রাণী আশ্রয়কেন্দ্র এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রাচুর্য। এখানকার আবহাওয়াও বেশ মনোরম।
শহরের মধ্যে ও আশেপাশের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে একটি দুর্দান্ত সময় ব্যয় করলে আপনার মন আনন্দিত ও তৃপ্তি পূর্ণ হয়ে যাবে। জলপাইগুড়ি ঘুরতে গেলেই আপনি বুঝতে পারবেন, এই শহর কতটা সুন্দর আর প্রাণবন্ত।
২. গোরুমারা জাতীয় উদ্যান
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৬০ কিলোমিটার |
শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৬৫ কিলোমিটার |
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত গোরুমারা জাতীয় উদ্যান জলপাইগুড়ি জেলার একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত, এই মাঝারি আকারের পার্কটি মূলত ভারতীয় গন্ডারের জন্য পরিচিত এবং এটি সবুজ গাছপালা এবং তৃণভূমিতে আচ্ছাদিত। পার্কের মনোরম দৃশ্য সত্যি তৃপ্তিদায়ক।
আপনি এখানে তিনটি স্বতন্ত্র নদী-মূর্তি নদী, রায়ডাক নদী এবং প্রধান জলঢাকা নদীর অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পারেন। সরস্বতী, বুধুরাম, চৌতুরাম, বিছাভাঙ্গা এবং মূর্তি প্রভৃতি গ্রামগুলি এই বিস্তৃত বনকে ঘিরে রেখেছে।
অসংখ্য সাধারণ উদ্ভিদ, ছোট ও বড় গাছের দল এবং বন্য পরিবেশ পার্কটিকে শোভিত করে। বন্য শুয়োর, পিগমি হগ, বড়ো কাঠবিড়ালি, চিতল হরিণ, স্প্যাংল্ড ড্রঙ্গো, কাঠঠোকরা, সাম্বল হরিণ এবং ভারতীয় নেকড়ে এখানের কিছু বিশেষ প্রাণী এবং পাখিদের জাতি।
বন্যপ্রাণী দেখার সর্বোত্তম উপায় হল জিপ সাফারির মাধ্যমে বা আপনি এই বন্য পরিবেশ উপভোগ করতে পারেন যাত্রাপ্রসাদ এবং চন্দ্রচূড়ের মতো ওয়াচ টাওয়ার এর উপর থেকে যেখান থেকে আপনিই চমৎকার ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পেতে পারেন এই অরণ্যের ও প্রাণীদের।
৩. মূর্তি
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৭১ কিলোমিটার |
শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৭৭ কিলোমিটার |
মূর্তি হল একটি ছোট গ্রাম যার নামকরণ করা হয়েছে একটি সুন্দর নদীর ওপর। এই নদী এই গ্রাম বরাবর এবং নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের উঁচু ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম এবং ভুটানের সীমানার সংযোগের কাছে উৎপন্ন হয় এবং পাহাড়ি উপত্যকা থেকে স্যামসিং এলাকার মধ্য দিয়ে ডুয়ার্সে প্রবাহিত হয়।
গোরুমারা জাতীয় উদ্যান ঘুরে দেখার জন্য এই জায়গাটি রাত্রে বসবাসের জন্য অন্যতম সেরা জায়গা। আপনি এখান থেকে চাপড়ামারী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যেও প্রবেশ করতে পারেন।
মূর্তিতে প্রকৃতি তার সবচেয়ে বিশুদ্ধতম রূপে নিজেকে পরিবেশন করে। মূর্তি নদীর পাড়ে বসে আপনি এক চিরন্তন শান্তি উপভোগ করবেন। নদীটি যেহেতু হিমবাহ থেকে উৎপন্ন নয় তাই এখানে বর্ষাকাল ব্যতীত সামান্য জল থাকে। তাই আপনি খালি পায়ে এটি অতিক্রম করতে পারেন।
মুরতির কাছে প্রায়শই শুকনো নদীর তীরে ময়ূর হাঁটতে দেখা যায়।
৪. স্যামসিং
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৮৭ কিলোমিটার |
শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৭৮ কিলোমিটার |
৩০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত স্যামসিং, বাংলার কয়েকটি সেরা জায়গাগুলির মধ্যে একটি। এই জায়গার প্রাকৃতিক পরিবেশ শব্দে বর্ণনা করা সম্ভব হবেনা কারণ এখানকার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য আপনাকে ভুলোকে এক স্বর্গীয় দর্শন দেবে। জায়গাটি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এবং বেশ নির্মল।
এর কিছু প্রধান আকর্ষণ হল এর বিস্তৃত শ্যামল চা বাগান, স্নিগ্ধ নদী এবং সমতল ভূমিতে মিশে যাওয়া অস্পষ্ট ভূ-সংস্থান এবং অনাবিষ্কৃত প্রকৃতি। সামসিং-এর একদিকে বিশাল পাহাড়ের অত্যাশ্চর্য দৃশ্য এবং অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত শান্ত সবুজ তৃণভূমি।
আপনি সহজেই এই সুন্দর প্রাকৃতিক বৈপরীত্য থেকে আপনার চোখ ফিরিয়ে নিতে পারবেন না। এই স্থানে গেলে আপনার মনে হবে প্রকৃতি সমস্ত রঙগুলিকে একত্রিত করে প্রত্যেকটি জীবিত ও নির্জীব জিনিসগুলির উপর তুলির টান দিয়েছে নিখুঁত ভাবে।
সামসিং-এ গ্রীষ্মকাল বেশ মনোরম। স্যামসিং দেখার সেরা সময় হল অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে যখন পাহাড়ের ঢালগুলি ও চারপাশের সবুজ ও সোনালী দৃশ্য অত্যন্ত সুন্দর দেখায়।
৫. মালবাজার
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৬৩ কিলোমিটার |
শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৫৫ কিলোমিটার |
মালবাজার উত্তরবঙ্গের একটি সুপরিচিত শহর। ইন্দো-ভুটান সীমান্ত শহর জয়গাঁও এর নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এটি জলপাইগুড়ি জেলার একটি সমৃদ্ধ ব্যবসায়িক সঙ্গম হিসাবে বিবেচিত হয়।
আপনি সহজেই ট্রেন বা রাস্তাপথ দ্বারা এই শহরে প্রবেশ করতে পারেন। ডুয়ার্সের বিখ্যাত বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য অন্বেষণের জন্য মালবাজার একটি আদর্শ কেন্দ্রবিন্দু। গোরুমারা জাতীয় উদ্যান, চাপড়ামারি, এবং চুকচুকিয়া এই স্থানের কাছাকাছি কয়েকটি বিশেষ আকর্ষণ।
মালবাজার যাওয়ার সময় বিন্দু, টোডে, পারেন, ঝালং ইত্যাদির মতো কিছু সীমান্তের অঞ্চলের দর্শন পাওয়া যায়। এই ছোট শহরটিতে ঔপনিবেশিক আমলের চা বাগান এবং একটি সুন্দর আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে যা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
৬. চাপড়ামারী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৭৬ কিলোমিটার |
শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব | ৮১ কিলোমিটার |
চাপড়ামারী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য মূলত গোরুমারা জাতীয় উদ্যানের একটি সম্প্রসারণ। এই দুটি বন মূর্তি নদী দ্বারা বিভক্ত। এই নদী তার পশ্চিমে অবস্থিত। পূর্ব দিকে অবস্থিত জলঢাকা নদীর সীমানা।
এটি তুলনামূলক ভাবে ছোট বন হলেও, চাপড়ামারী জলপাইগুড়ির অন্যতম প্রাচীন অরণ্য। উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্র্যের কারণে এটি ১৮৯৫ সালে প্রথম ফরেস্ট রিজার্ভ হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিল।
এখানে বিভিন্ন মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় যা চাপরা নামে পরিচিত। তাই থেকে চাপড়ামারীতে নামের উৎপত্তি হয়েছে। আপনি এই এলাকায় হাতি, চিতাবাঘ, বাইসন, গায়ে ডোরা কাটা হরিণ, স্কারলেট, মিনিভেট, ডার্টার, ব্রাহ্মণী হাঁস এবং টিল দেখতে পারেন। এছাড়াও আপনি চাপড়ামারীতে বছরের বিভিন্ন সময়ে অনেক অর্কিড ফুল দেখতে পারেন।
আপনি চাপড়ামারীতে ওয়াচ টাওয়ার এবং জিপ সাফারির দ্বারা ঘন জঙ্গল এবং বন্যপ্রাণী অন্বেষণ করতে পারেন।
এগুলি জলপাইগুড়ি জেলার কিছু বিখ্যাত স্থান।
গাড়ি নিয়ে লম্বা সফর বা বন্ধুদের দল নিয়ে এই সমস্ত জায়গায় রোমাঞ্চকর যাত্রা আপনার অন্তর ও আত্মাকে পুনরুদ্ধার করবে এবং এক নতুন সতেজ অভিজ্ঞতা দেহে। আপনি যদি প্রকৃতি প্রেমী হন এবং প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর ছবি নিতে ভালোবাসেন, তাহলে জলপাইগুড়ি জেলা হল অন্যতম সেরা জায়গা।
আপনি একটি চমৎকার ছুটি কাটাতে অসংখ্য অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান এবং টাইগার রিজার্ভ ঘুরতে পারেন।
এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন
- গড় পঞ্চকোট (পুরুলিয়া) – কোথায় থাকবেন, কি কি দেখবেন জেনে নিন
- বড়ন্তি (পুরুলিয়া) পশ্চিমবঙ্গ – রিসোর্ট, ঘুরে আসার সেরা সময়
- হাওড়া জেলার ৮টি দর্শনীয় স্থান – পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ
- অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে ঘুরে দেখার ৭টি সেরা পর্যটন কেন্দ্র
- বেনারস শহরের ৭টি হিন্দু ধর্মীয় স্থান যেকানে আপনি ঘুরে আস্তে পারেন
- কলকাতার ৪টি বিখ্যাত হেরিটেজ ক্যাফে যেকানে আপনি ঘুরে আস্তে পারেন