বাঙালী যেমন ভালোবাসেন খেতে, তেমন ভালোবাসেন ঘুরতে। ভোজন আর ভ্রমণ বিলাসে ভরপুর নব বাঙালী সম্প্রদায়। এখন তো শীতের শেষ।
এই শেষ বেলায় ঘুরে আসবেন নাকি? পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যময় মায়াপুর ইসকন মন্দিরে।
আজকের এই আর্টিকেলের আপনি মায়াপুর ইসকন মন্দির সম্বন্ধে নিচে দেওয়া বিষয়গুলি জানতে পারবেন
- মন্দিরের ইতিহাস
- মন্দির যাওয়ার সেরা সময়
- মন্দির কিভাবে যাবেন
- মন্দিরে কি কি দেখবেন
- কোথায় থাকবেন
- কোথায় ও কি কি খাবেন
তাহলে চলুন এই বিষয় গুলি বিস্তারিতভাবে দেখে নেওয়া যাক…
মায়াপুর ইসকন মন্দিরের ইতিহাস
মায়াপুর নদীয়া জেলায় অবস্থিত, এটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান নামে বিখ্যাত। বাংলায় সেন রাজাদের আমলে (১১৫৯-১২০৬) নবদ্বীপ ছিল বাংলার রাজধানী।
লক্ষণ সেনের রাজধানী ছিল গৌড়। সেই গৌড় থেকে তার রাজধানী নবদ্বীপে সরিয়ে আনেন। এই লক্ষণ সেনের আমলে বখতিয়ার খিলজি নবদ্বীপ জয় করেন ও তখন থেকেই বাংলায় প্রথম মুসলিম শাসন শুরু হয়।
তখন নবদ্বীপ ছিল শিক্ষার পীঠস্থান। এখানেই জন্ম হয় শ্রীচৈতন্যদেবের।
১৯১৮ সালে ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের চৈতন্য মঠ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মায়াপুরে নতুন ভাবে ভক্তির প্লাবন হয়।
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ তাঁর দীক্ষাগুরুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইসকনের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
ইসকন মন্দির যাওয়ার সেরা সময়
দোলযাত্রা, জন্মাষ্টমী, রাসযাত্রা, রথযাত্রা
কীভাবে যাবেন ইসকন মন্দির
হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে কাটোয়া লোকাল ধরে চলে আসুন বিষ্ণুপ্রিয়া হল্টে। সেখান থেকে টোটো পেয়ে যাবেন গঙ্গার ঘাটে যাবার জন্য, ভাড়া পড়বে ১০ টাকা তার পর ৩ টাকায় নৌকায় চলে আসুন মায়াপুর ঘাটে।
এছাড়াও শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর লোকাল ধরুন। এরপর অটো বা ম্যাজিক গাড়ি করে স্বরূপগঞ্জের ঘাট। এই ঘাট থেকে নদী পাড় হলেই মায়াপুর।
এছাড়াও বাসে আসা যায়, ধর্মতলা থেকে সরাসরি বাস যায় মায়াপুরে।
বাসের সময়সূচি নীচে দেওয়া হল:
- কলকাতা – মায়াপুর (সকাল ৬:১৫)
- কলকাতা – মায়াপুর (দুপুর ৩.৩০)
- মায়াপুর – কলকাতা (সকাল ৬:১৫)
- মায়াপুর -কলকাতা (দুপুর ৩:৩০)
কী কী দেখবেন ইসকন মন্দির ও তার আশেপাশে
মায়াপুর ইসকন মন্দির ও তার আশেপাশে অনেক দেখার জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে কিছু দর্শনীয় স্থান নিচে উল্লেখ করা রইলো।
মায়াপুর ইস্কন চন্দ্রোদয় মন্দির
মায়াপুর গেলে, মায়াপুর ইস্কন চন্দ্রোদয় মন্দির হল মায়াপুরের মুল আকর্ষণ।
এখানে শ্রীকৃষ্ণের জীবন আখ্যান প্রদর্শিত। শ্রী চৈতন্যদেবের জন্মস্থান হিসেবে মায়াপুর ‘চন্দ্রোদয় মন্দির’ নির্মাণ করেন সন্ত বিনোদ ঠাকুর।
মন্দিরে প্রবেশ করার পর দেখতে পাবেন ভজন কুঠির। এখানে দেশি বা বিদেশী ভক্তগণের নাম কীর্তন শুনতে পাবেন। মন্দিরটি অসম্পূর্ন ২০২২ সালে এটি সম্পূর্ণ হবে।
গঠিত হবে পৃথিবীর সব চেয়ে উচু হিন্দু মন্দির। পুরো পৃথিবী জুড়ে রয়েছে ইসকনের মন্দির। মন্দিরের মূল আকর্ষণ রাধাকৃষ্ণের বিগ্ৰহ।
অসাধারণ সেই বিগ্ৰহ যেন চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে সবসময়। মন্দিরে ভোরবেলায় মঙ্গল আরতি ও সন্ধ্যা আরতি দেখার মতো।
সমাধি মন্দির
এরপরেই রয়েছে সমাধি মন্দির। দর্শনার্থী দের জন্য সমাধি মন্দির সকাল ৭:৩০ থেকে ১ টা পর্যন্ত ও বিকাল ৩:৩০ টা থেকে ৮:৩০ পর্যন্ত খোলা।
এই মন্দিরের দোতলায় শ্রী শ্রী প্রভুপাদ এর ব্যক্তি গত ঘর ও জিনিস দেখতে পাবেন। প্রভুর ব্যাবহৃত এম্বাসেডর গাড়িটি দেখতে পাবেন। তবে এর জন্য আপনাকে টিকিট কাটতে হবে।
চৈতন্য লীলা প্রদর্শনী
এরপরেই দেখবেন, চৈতন্য লীলা প্রদর্শনী। ভক্ত গণের জন্য এটি খোলা থাকে সকাল ১০ টা থেকে ১ টা ও বিকাল ৪ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত।
গোশালা
ইস্কনের এই গোশালায় প্রায় ২০০ টি গরু আছে। এই গরুরু দুধ, ঘি এমনকি গোমূত্র বিক্রি করা হয়।
মায়াপুর ডিজিটাল তারামন্ডল
মায়াপুরের আর এক আকর্ষণ ডিজিটাল তারামন্ডল। সকাল ১০.০০ টা থেকে রাত ৮.৩০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে মায়াপুর ডিজিটাল তারামন্ডল।
মায়াপুর শ্রী চৈতন্য মঠ
এখানে চৈতন্যদেবের মাসি মেসোর বাড়ি দেখতে পাওয়া যায়।
শ্রীবাস অঙ্গন
এখানেই জগাই-মাধাই শ্রীচৈতন্যদেবের খোল ভেঙে দিয়েছিলেন। আর সেই খোল এখানে এখনো সংরক্ষণ করে রাখা আছে।
শিব ডোবা
কৈলাশ অধিপতি শ্রী শঙ্কর মায়াপুর আসেন চৈতন্য মহাপ্রভুর দর্শনে।তবে তার দেখা না পেয়ে কষ্টে অশ্রুজলে সৃষ্টি হয় এই ডোবা।
এছাড়াও এখানে রয়েছে অনেক মঠ, গদা ভবন, গীতাভবন, ঈশ্বরধ্যান ভবন, বংশী ভবন, কঙ্চ ভবন, নিত্যানন্দ কুটির, শ্রুতি ভবন, শঙ্খ ভবন ।
মায়াপুর ইসকন মন্দিরে কোথায় থাকবেন
গঙ্গার ঘাট থেকে শুরু করে মায়াপুর চন্দ্রোদয় মন্দির পর্যন্ত রয়েছে শতাধিক হোটেল এবং লজ।
কম বাজেট থেকে শুরু করে লাক্সারি হোটেল সব পেয়ে যাবেন।
ইসকন মন্দির চত্বরে ১০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা প্রতি দিন হিসেবে ঘর পেয়ে যাবেন।
আপনি চাইলে মায়াপুর মন্দিরের গধা ভবন গেস্ট হাউসে রুম বুক করে নিতে পারেন।
কোথায় ও কী খাবেন মায়াপুর ইসকন মন্দিরের
গীতা ভবন, গদা ভবন , নামহট্ট ভবনে খাবার পাওয়া যায়। এখানে খাবারের পাশাপাশি থাকারও ব্যবস্থা রয়েছে। দুপুরে ও রাত্রে খাবারের ব্যাবস্থা আছে।
দুপুরের খাবার ৫০ থেকে ৭০ টাকা ও রাত্রের খাবার ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে থাকে। বাচ্চা দের জন্য হাফ দামে টিকিট নিতে হবে।
দুপুরে খাবার খাওয়ার জন্য ১২ টার মধ্যে কুপন নিতে হবে, আর রাতে খাওয়ার জন্য সন্ধ্যার আগে কুপন নিতে হবে।
এছাড়াও ইসকন মন্দিরে রয়েছে অসংখ্য ভোজনালয়ের দোকান ও পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত।
মন্দির চত্বরে রয়েছে মহাপ্রভু রেষ্টুরেন্ট। সেখানে রয়েছে চা, পাস্তা, পিজা, কেক, বার্গার, ধোসা, ইডলি, আইসক্রিম, ফলের জুস, দুপুরের মহাপ্রসাদসহ অনেক কিছু। তাই বলা যায় খাবার অসুবিধা হবে না।
তাহলে চলেই আসুন দুদিনের ছুটিতে মায়াপুর ঘুরতে।
পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে কিছু ওয়েব স্টোরি (Web Stories):
এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন
- গড় পঞ্চকোট (পুরুলিয়া) – কোথায় থাকবেন, কি কি দেখবেন জেনে নিন
- বড়ন্তি (পুরুলিয়া) পশ্চিমবঙ্গ – রিসোর্ট, ঘুরে আসার সেরা সময়
- হাওড়া জেলার ৮টি দর্শনীয় স্থান – পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ
- অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে ঘুরে দেখার ৭টি সেরা পর্যটন কেন্দ্র
- বেনারস শহরের ৭টি হিন্দু ধর্মীয় স্থান যেকানে আপনি ঘুরে আস্তে পারেন
- কলকাতার ৪টি বিখ্যাত হেরিটেজ ক্যাফে যেকানে আপনি ঘুরে আস্তে পারেন