কখনও কখনও ইঁট কাঠ পাথরে মোড়া শহুরে মলিনতা থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করার জন্য আমাদের সপরিবারে একটি নিখুঁত সপ্তাহান্তে ছুটির ভীষণ প্রয়োজন। সমুদ্র সৈকত, পাহাড় এবং বন জঙ্গল এর মত কিছু সেরা গন্তব্য আমাদের হাতছানি দেয় বারংবার।
কিন্তু ধরুন বাংলার কলেই এক সুন্দর এবং বিশেষ গন্তব্য যদি আপনাকে এক উষ্ণ আহ্বান জানায়, তাহলে তা আপনি উপেক্ষা করে থাকতে পারবেন?
কলকাতা থেকে সপ্তাহান্তে যাওয়ার পরিকল্পনা করার জন্য পূর্বস্থলী একটি অবিশ্বাস্য জায়গা। এটি পাখি পর্যবেক্ষকদের কাছে স্বর্গ এবং অক্সবো হ্রদের জন্য পরিচিত। এটি পূর্ব বর্ধমান জেলায় এক বিশেষ সৌন্দর্যের ছাপ ফেলে।
এই নিবন্ধে, আপনি পূর্বস্থলী এবং চুপির চর সম্পর্কে নিম্নলিখিত পয়েন্টগুলি জানতে পারবেন,
- কিভাবে পৌঁছাবেন
- প্রাকৃতিক পরিবেশ
- কি কি করবেন
- ঘুরতে যাওয়ার সেরা সময়
- পূর্বস্থলী রোড ট্রিপ
- থাকার জায়গা
- কাছাকাছি আকর্ষণ
তাহলে চলুন এই প্রতিটি পয়েন্ট বিস্তারিতভাবে দেখে নেওয়া যাক।
পূর্বস্থলী কিভাবে যাবেন
আপনি কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অংশ থেকে ট্রেন, বাস এবং গাড়িতে সহজেই পূর্বস্থলী পৌঁছাতে পারেন।
ট্রেনে
পূর্বস্থলী যাওয়ার একটি সেরা ট্রেন হলো হাওড়া – কাটোয়া লোকাল। এই ট্রেনে আপনি প্রায় ৩ ঘন্টার মধ্যে পূর্বস্থলী পৌঁছে যাবেন।
আপনি স্টেশন এলাকা থেকে একটি টোটো ভাড়া করে লেকটিতে যেতে পারেন। এটি ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি সময় নেবে না।
বাসে
আপনি কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য অংশ থেকে নবদ্বীপ বা মায়াপুর যাওয়ার যেকোনো বাস ধরতে পারেন। এরপর সেখান থেকে পূর্বস্থলী পৌঁছানো যায়।
গাড়িতে
কলকাতা থেকে গাড়িতে করে আপনি সহজেই পূর্বস্থলী পৌঁছাতে পারেন। দূরত্ব প্রায় ১৪০ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে পূর্বস্থলী যেতে প্রায় ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগবে।
পূর্বস্থলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
প্রতি বছর ডিসেম্বরের প্রথম দিকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে পূর্বস্থলীর দিকে রওনা দেয়।
অক্সবো হ্রদ, বা “চুপির চর”, চুপি এবং কাষ্ঠশালীর মতো গ্রামগুলির নিকট প্রবাহিত পবিত্র গঙ্গা থেকে উদ্ভূত হয়েছে। চুপির চরের স্বচ্ছ নীল জল, বিস্তীর্ণ ফলের বাগান এবং আশেপাশের কৃষিজমি ৭০টিরও বেশি প্রজাতির স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখিদের আশ্রয় দেয়।
অক্সবো হ্রদটি ৩.৫ বর্গ কিমি জুড়ে রয়েছে এবং তিনটি গ্রাম নিয়ে একটি দ্বীপকে ঘিরে রেখেছে। এখানে স্থানীয় নৌকায় পাখি পর্যবেক্ষন করা যায় এবং মাঝিরা পরিযায়ী পাখি দেখতে দর্শনার্থীদের গাইড করে।
হ্রদটির একটি সরু চ্যানেল রয়েছে যা এটিকে পবিত্র গঙ্গার সাথে সংযুক্ত করেছে এবং এইভাবে এটি একটি অবিচ্ছিন্ন জলের উৎস হিসেবে বয়ে চলেছে।
গঙ্গার প্লাবনভূমিতে সমৃদ্ধ ও উর্বর পলিমাটি এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত পূর্বস্থলী অঞ্চলকে সবুজ ও শ্যামল তৈরী করেছে। তাই আপনি ভুট্টা, ধান, সরিষা, পাট, আলু এবং সারা বছর ধরে বিভিন্ন ধরণের শাকসবজি, ফল এবং ফুলের মত বিভিন্ন ফসল কৃষি জমি দেখতে পারেন।
এগুলি সূর্যের আলোতে বেশ সুন্দর দেখায়, যা সত্যিই স্বর্গীয় দেখতে লাগে।
পূর্বস্থলীতে কি কি করবেন
- হ্রদ বরাবর বিভিন্ন সুন্দর এবং বিরল পরিযায়ী পাখিদের প্রজাতি দেখুন
- কৃষিজমি এবং বাগানের চারপাশ টা ঘুরে দেখুন।
- চুপি চরের দিগন্তে সুন্দর সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের সাক্ষী হন।
- হ্রদে নৌকা বিহারে অংশগ্রহণ করুন।
- প্রকৃতির অপরূপ ছবি তুলুন এবং সুন্দর বাগান অন্বেষণ করুন।
- আপনার বাচ্চাদের সাথে শিশু পার্কে যান এবং ওয়াচ টাওয়ার থেকে মোহময় প্রকৃতির সুন্দর দৃশ্যের সাক্ষী থাকুন।
পূর্বস্থলী ঘুরে দেখার সেরা সময়
পূর্বস্থলী সারা বছর খোলা থাকে। তবে, এই এলাকায় প্রধান আকর্ষণ পরিযায়ী পাখি, যা বিশেষ করে শীতের মাসগুলিতে দেখা যায়।
প্রতি বছর, নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে, পরিযায়ী পাখিরা মধ্য এশিয়া, রাশিয়া, ইউরোপ এবং অন্যান্য দূরবর্তী দেশ থেকে মধ্য এশিয়া দিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার উড়ে পূর্বস্থলীতে প্রবেশ করে।
পূর্বস্থলীতে রোড ট্রিপ
কলকাতা থেকে পূর্বস্থলী যাত্রার পথে রয়েছে কালনা, হংসেশ্বরী, গুপ্তিপাড়া এবং সুখরিয়া মন্দির। এই যাত্রা পথের মধ্য দিয়ে একটি আনন্দদায়ক অভিক্ষতার সাক্ষী থাকবেন।
উপরন্তু, আপনি সবুজে শ্যামলে ভরা বিশাল বিস্তৃতি জমি এবং সমুদ্রনগর এবং নাতুনগ্রামের মতো অঞ্চলগুলির মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন, যা তাদের বস্ত্র ও কারুশিল্পের জন্য পরিচিত।
আপনি যদি নির্জনতা এবং শান্তির খোঁজে কলকাতার কাছাকাছি একটি সপ্তাহান্তে ছুটির গন্তব্য খুঁজছেন তবে পূর্বস্থলীতে ভ্রমণ বেশ মজাদার হবে।
পূর্বস্থলীতে থাকার জায়গা
পূর্বস্থলীতে সর্বোত্তম থাকার বিকল্প হল চুপি কাষ্ঠশালী পাখিরালয়, যা পূর্বস্থলী অক্সবো লেক বা চুপি চরের পাশে অবস্থিত। পূর্বস্থলী ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস (BDO), কাষ্ঠশালী গ্রাম পঞ্চায়েত এবং কয়েকটি আশেপাশের ক্লাব যৌথভাবে এই বাসস্থান টি প্রতিষ্ঠা করে।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা সম্পূর্ণরূপে এই বিশেষ গ্রাম্য আকর্ষণ পরিচালনা করে। চারটি নবনির্মিত লেকসাইড কটেজ, একটি আট শয্যার ডরমেটরি, একটি সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ পার্ক এবং পাখি দেখার টাওয়ারও এখানে রয়েছে।
পূর্বস্থলীর কাছাকাছি অন্যান্য আকর্ষণ
পূর্বস্থলীতে ভ্রমণের পরে হাতে সময় পেলে আপনি দেখতে পারেন কাছাকাছি অবস্থিত এমন কয়েকটি স্থান রয়েছে। আপনি মায়াপুর এবং নবদ্বীপের নিকটবর্তী শহরে যেতে পারেন এবং এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাস অন্বেষণ করতে পারেন।
এছাড়াও, আপনি শ্রীবতী টেরাকোটা মন্দির এবং নাতুন গ্রাম পরিদর্শন করতে পারেন।
আপনি যদি ফটোগ্রাফি প্রেমী হন তবে এই জায়গাটি আপনার জন্য আদর্শ। আপনি এখানে পরিযায়ী পাখির প্রজাতির সুন্দর ছবি তুলতে পারেন এবং কটেজ, বাগান, পুতুল এবং মডেল তৈরিতে নিযুক্ত গ্রামীণ সম্প্রদায়ের অত্যাশ্চর্য কিছু ছবি তুলতে পারেন।
পূর্বস্থলী অবশ্যই আপনার মুখে হাসি আনবে।
এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন
- গড় পঞ্চকোট (পুরুলিয়া) – কোথায় থাকবেন, কি কি দেখবেন জেনে নিন
- বড়ন্তি (পুরুলিয়া) পশ্চিমবঙ্গ – রিসোর্ট, ঘুরে আসার সেরা সময়
- হাওড়া জেলার ৮টি দর্শনীয় স্থান – পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ
- অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে ঘুরে দেখার ৭টি সেরা পর্যটন কেন্দ্র
- বেনারস শহরের ৭টি হিন্দু ধর্মীয় স্থান যেকানে আপনি ঘুরে আস্তে পারেন
- কলকাতার ৪টি বিখ্যাত হেরিটেজ ক্যাফে যেকানে আপনি ঘুরে আস্তে পারেন