Skip to content

দীঘা টুর গাইড – কোথায় থাকবেন, কি দেখবেন জেনে নিন সব

কলকাতা থেকে কিছু দূরেই অবস্থিত দীঘা সমুদ্র সৈকত।

আশেপাশে প্রায় প্রত্যেক মানুষকেই জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলতে পারবেন -দীঘার সমুদ্র সৈকত কোথায়! কারণ অধিকাংশ বাঙালির সারা বছরের ভ্রমণ তালিকায় দীঘা ও পুরী থেকেই যায়।

প্রকৃতি ও মানুষের এই অসামান্য মেলবন্ধনে দীঘা সমুদ্র সৈকত আজ এত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

এই আর্টিকেলেটির মাধ্যমে আপনি দীঘা সম্মন্দে যা জানতে পারবেন সেগুলি হলো,

  1. দীঘা কোথায় অবস্থিত
  2. দীঘা কিভাবে পৌঁছাবেন
  3. কি কি দেখতে পাবেন
  4. থাকার ব্যবস্থা কেমন
  5. খাদ্যতালিকায় কি কি পাবেন
  6. কোন সময় গেলে সকল সুযোগ- সুবিধা পাবেন

তাহলে চলুন এই বিষয়গুলি বিস্তারিত ভাবে দেখে নেওয়া যাক…

দীঘার সমুদ্র সৈকত কোথায় অবস্থিত

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর অঞ্চলের অন্তর্গত। সুবিশাল জলাভূমির চারপাশে গড়ে উঠেছে নানান টুরিস্ট স্পট।

আর এই স্পটগুলোকে কেন্দ্র করেই সৈকতের চারধারে চলছে নানান ব্যবসা বাণিজ্য। সুবিশাল বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বালুকাময় স্থলে আছড়ে পড়ছে জলোচ্ছ্বাস।

কি ভাবে পৌঁছাবেন দীঘা

কলকাতা শহর থেকে কিছু দূরে এই সৈকত অবস্থিত। দুটি রুটের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই পৌঁছতে পারেন দীঘায়।

এক ট্রেনের মাধ্যমে ও এক বাসের মধ্যে।

এছাড়াও প্রাইভেট কার এর মাধ্যমে যেতে পারেন। তবে সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী আমি বাস এবং ট্রেনের পরিষেবা তুলে ধরলাম।

হাওড়া থেকে দীঘা যাওয়ার ট্রেন রুট

আপনি খুব সহজেই হাওড়া থেকে ট্রেন পেয়ে যাবেন দীঘার। বেশ কয়েক ঘন্টার মধ্যে আপনাকে পৌঁছে দেবে দীঘা স্টেশনে, আর সেখান থেকেই অটো ও টোটোর মাধ্যমে আপনি সরাসরি পৌঁছাতে পারেন সৈকতে।

ট্রেনের টিকিটের দাম গড়ে ১০৫ থেকে ১০০০/১৫০০ পর্যন্ত। যদিও এটি নির্ভর করবে আপনি ট্রেনের কোন ক্লাসে যেতে ইচ্ছুক তার উপর।

এখানে এসি থেকে ননএসি এবং জেনারেল সব রকম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাবেন।

হাওড়া থেকে দীঘা যাওয়ার বাস রুট

ধর্মতলা থেকে আপনি সরাসরি বাস পেয়ে যাবেন দীঘা যাবার। এখানেও আপনি এসি ও নন এসি ভ্যারাইটি পেয়ে যাবেন।

১৫০ থেকে ৮৫০ টাকার মধ্যে আপনি বাসের টিকিট পেয়ে যাবেন।

এখানে ট্রেনের থেকে একটু বেশি সময় লাগবে আপনি ৯/৮ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে পারেন দীঘায়।

সরাসরি কোলাঘাটের ওপর দিয়েই ছুটে চলবে দীঘার পথে।

মাঝে মাঝে কিছু কিছু জায়গায় বাস দাঁড়াবে , সেইখানে ধাবা থেকে আপনি খাবার সামগ্রী পেয়ে যাবেন ও অন্যান্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়ে যাবেন।

কি কি দেখতে পাবেন দীঘা ও তার আশেপাশে

সি বিচ বা সমুদ্র সৈকত সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকেই কম-বেশি ধারণা রয়েছে। বিশাল জলাশয় নিয়ে গঠিত বালুকাময় এই ভূমি।

সৈকতের চারপাশ সুসজ্জিত, যা আপনাকে নিশ্চয় আকর্ষণ করবে।

সমুদ্র সৈকত ছাড়া এখানে আপনি দেখতে পাবেন ঝাউবাগান। যেখানে কমবেশি শুটিং , শর্ট ফিল্ম এমনকি ভ্রমণের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে ব্যস্ত মানুষদেরকে আপনার চোখে পড়বে।

তাদের দোষ কি, প্রকৃতির এমন অপরূপ দৃশ্য কেনা ক্যামেরাবন্দি করতে চায়!

ওল্ড দীঘা ও নিউ দীঘা সি বিচ

দীঘার সমুদ্র সৈকত কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

যথা-ওল্ড দীঘা ও নিউ দীঘা। সমুদ্র সৈকতের এই দুই বিভাজনের মধ্যেও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন বিশেষত্ব।

আপনি দীঘায় যাওয়া মানুষদের মুখে প্রায় শুনেই থাকবেন-ওল্ড দীঘায় চলুন ভালো লাগবে আবার কেউ কেউ বলবেন না না নিউ দীঘা বেশি ভালো!

এসব বিতর্ক তো লেগেই থাকবে, তবে আমার মত অনুসারে কিন্তু দুটি সৈকতই দুই রকম ভাবেই শ্রেষ্ঠ।

ওল্ড দীঘা

আবহাওয়াবিদ এর মত অনুসারে কিংবা সমুদ্র সৈকতের ব্যবধান অনুসারে ওল্ড দীঘাতে মানুষজনকে স্নান করতে নামতে দেওয়া হয় না।

মানুষের আটকানোর জন্য সৈকতের মুখ্য প্রবেশ দ্বারে ঢেলে দেওয়া হয়েছে বিশাল বিশাল আকৃতির পাথর। আর এই পাথরের চারদিকে করে দেওয়া হয়েছে বসার সিট, আর সেখানে রয়েছে বিভিন্ন দোকান পাট।

নানান বাহারি জিনিস পাবেন সেখানে- ঘরের আসবার পত্র থেকে শুরু করে কানের দুল, ব্যাগ, পুতুল, শাঁখা ইত্যাদি।

একটু ফিরে আসি খাদ্য রসিক বাঙালির কাছে। এই সৈকতে পেয়ে যাবেন নানা বাহারি খাবার যেমন –ফুচকা আইসক্রিম ,মাছ ভাজা ,কাঁকড়া, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আপনি আপনার সপরিবারে সমুদ্র সৈকত উপভোগ করতে পারবেন নিশ্চিন্ত রূপে।

কিন্তু কঠোরভাবে নির্দেশ জারি করা হয় সমুদ্র সৈকতের ঢালা পাথরের নিচে যাতে কেউ না নামে, খুব অল্প সময়ে এই সৈকতে নামতে দেন সী বিচ পুলিশ।

নিউ দীঘা

অন্যদিকে নিউ দীঘা, যেখানে ওল্ড দিঘার মতন হয়তো বসার জায়গা নেই তবে জলে নেমে সমুদ্রের জল উপভোগ করার ফুল পারমিশন আছে এখানে।

এই সমুদ্র সৈকতের ও চারধারের রয়েছে দোকান ,চশমার দোকান থেকে শুরু করে ডাবের দোকান ইত্যাদি।

দীঘা তে কোথায় থাকবেন

দুই সৈকতের কাছাকাছি পেয়ে যাবেন থাকার মতন সুব্যবস্থা।

ওল্ড দীঘা এবং নিউ দীঘার মধ্যকার ব্যবধান খুবই স্বল্প তাই আপনি খুব সহজেই দুটি দিকই উপভোগ করতে পারবেন।

এছাড়াও এই সৈকত কুলের পাশে গড়ে উঠেছে নানান পার্ক এবং অন্যান্য সৈকত।

যেমন দর্শনীয় স্থান হিসেবে নিউ দীঘা ও ওল্ড দিঘা ছাড়া আপনি যেতে পারেন, বিশ্ববাংলা দেখতে এবং শংকরপুর সমুদ্র সৈকত, উদয়পুর সমুদ্রসৈকতে মতন নানান ভিন্নরূপ সৈকত দেখতে।

এইগুলিও রূপে-গুণে এক একজন এক এক রকম বিশেষ।

সৈকত এর আশেপাশে আছে হোটেলের ব্যবস্থা। এবার আপনার উপর নির্ভর করবে আপনি কেমন হোটেলে থাকতে চান, আর সেই মতন হবে রুমের ভাড়া।

তবে সমুদ্র লাগোয়া হোটেল গুলি পার দিন হিসেবে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা নেবে। আপনি কেমন হোটেল নেবেন এবং নির্ভর করবে হোটেল পরিষেবা কেমন তার উপর টাকা কমবেশি হতে পারে।

যাই হোক, সমুদ্র সৈকতের চারিপাশে থাকার ব্যবস্থার অভাব কোন মতেই হবে না।

বলে রাখা ভালো যে হোটেল গুলির কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা আছে সেগুলি আপনাকে মেনে চলতে হবে।

রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটার পর্যন্ত খোলা থাকবে হোটেল, তার মধ্যেই আপনাকে হোটেলে ফিরে আসতে হবে। তানাহলে বেশ বিপাকে পড়তে হবে আপনাকে।

হোটেলে থাকা ,স্নান করার, খাবার ইত্যাদি সু -ব্যবস্থা পাবেন। শুধু হোটেলের প্রবেশ করার জন্য আপনাদের আইডি চেকিং করা হয় হোটেল কর্তৃপক্ষ সেফটির জন্য। যাওয়ার সময় সাথে আইডি অবশ্যই নিয়ে যাবেন।

কি কি আছে খাদ্য তালিকায়

বাঙালি খাদ্য রসিক তা আমরা প্রত্যেকেই জানি। আর বাঙালি মানে মাছে-ভাতে সেরা। আর দীঘায় এই মাছের উপদ্রব বেশ ভালো।

দীঘার মোহনা তো বিখ্যাত মাছের সেরা হিসেবে। খাদ্য তালিকায় আপনি মাছ মাংস কাংকড়া, চিংড়ি থেকে শুরু করে ভাত ডালে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া পেয়ে যাবেন।

এক মিনিট! তা বলে আপনি যদি চাইনিজ থেকে শুরু করে নানান ভ্যারাইটিজ খাবার খেতে চান তাহলে কি পাবেন না?

অবশ্যই পাবেন ভিন্ন ভিন্ন হোটেলে আপনি ভিন্ন ভিন্ন খাদ্য সামগ্রী অবশ্যই পেয়ে যাবেন।

সামুদ্রিক মাছ আপনি খুব স্বল্প দামে পাবেন।

টুরিস্ট এলাকা বুঝতেই পারছেন ফাইভ স্টার হোটেলের অভাব হবে না।

শুধু ফাইভস্টার তা কিন্তু নয় অডিনারি অর্থাৎ নরমাল হোটেল-ও আপনি পেয়ে যাবেন প্রচুর পরিমাণে।

তাদের খাবারের গুনাগত মানও কিন্তু ফাইভস্টার হোটেলের থেকে কোন অংশে কম নয়।

সকালের জলখাবারের সামগ্রী থেকে শুরু করে সন্ধ্যের টিফিন এবং রাতের ডিনার সবকিছুর উপযুক্ত খাবার আপনি এখানে পেয়ে যাবেন।

দীঘা যাওয়ার উপযুক্ত সময়

সারাবছরই খোলা এই সৈকত। তবে প্রত্যেকটা সিজেন একে অন্যের থেকে একটু অন্য।

অন সিজেন

যদি আপনি অন সিজেনে যান, অর্থাৎ জুলাই আগস্ট সেপ্টেম্বর তাহলে আপনি টুরিস্ট সিজনে গিয়ে পৌঁছাবেন।

এই সময়ের বিশেষত্ব হলো আপনি-সবকিছু নর্মাল দামে পাবেন। খাবার সামগ্রীর আকাশছোঁয়া দাম হবে না।

এই সময় জনজোয়ারে পূর্ণ থাকে সম্পূর্ণ সৈকত ও তার আশেপাশ। তাই আপনারা চেষ্টা করবেন রুম বুকিং করেই তারপর সেখানে যাওয়া, তা না হলে বেশ নাজেহাল হতে হবে রুম খালি পেতে।

অফ সিজেন

এই সময়েও বেশ লোকজনে পরিপূর্ণ থাকে এই সৈকত। তবে এইসময় মোহনা বন্ধ থাকার দরুন বেড়ে যায় সকল সামগ্রী দাম।

খাবার মূল্য বেশ আকাশছোঁয়া হয়ে যায়,প্রত্যেক জিনিসের প্রতি মূল্য বৃদ্ধির পরিমাণ বেড়ে যায়।

তাই সিজনের মধ্যে ফেলে অপেক্ষাকৃত কম খরচ হবে। যদি সময় না হয় তাহলে অফ সিজেনও কিন্তু খারাপ হবে না।

পরিশেষে বলি, দীঘার সৈকত হল বাঙালির আবেগ। দীঘায় গিয়ে আপনি বাঙালিয়ানার সম্পূর্ণ ছোঁয়া পেয়ে থাকবেন।

এছাড়াও ছোট খাটো দুই থেকে তিনদিনের ঘুরতে যাওয়া হিসেবে দীঘা কিন্তু মন্দ হয় না, সপরিবারে ঘুরে আসতে পারেন দীঘার সমুদ্র সৈকতে।


পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে কিছু ওয়েব স্টোরি (Web Stories):


এরকম আরো ভ্রমণের আর্টিকেল পড়ুন